মা কালীর অষ্টোত্তর শতনাম মন্ত্র

মা কালীর অষ্টোত্তর শতনাম মন্ত্রমা // কালীর ১০৮ নাম মন্ত্র // Maa Kali 108 Name


Maa Kali 108 Name,

মা কালী। দশ মহাবিদ‍্যার প্রথম দেবী হলেন মাকালী। তিনি শক্তির চূড়ান্ত প্রকাশ এবং সমস্ত জীবের জননী। সৃষ্টের পালনের জন‍্য তিনি সর্বদা দুষ্টকে ধ্বংস করেন। তিনি পূজিত হন পরম ব্রহ্ম রুপে। মাকালীর অনেক শক্তিশালী মন্ত্র রয়েছে তার মধ্যে অন‍্যতম হল মা কালীর অষ্টোত্তর শতনাম মন্ত্র। এই মন্ত্র যে কতটা শক্তিশালী এবং এটি যে কতটা কার্যকর তা এই মন্ত্রের মধ্যেই বলা রয়েছে। আপনি যদি প্রত‍্যহ রাতে শোবার আগে এই মন্ত্র ভক্তিভরে পাঠ বা শুধুমাত্র শ্রবণ করেন তাহলেই তার গৃহ ধনরত্নে ভরে উঠে,মনের সকল বাসনা পূরণ হয়,শত্রু এবং বিপদ দূর হয়,নির্ধন ব‍্যক্তি মায়ের কৃপায় ধন লাভ করে,নিঃসন্তানরা সন্তান লাভ করতে পারে এবং সর্বোপরি সেই ব‍্যক্তি মাকালীর চরণে স্থান পায়।


আপনারা প্রত‍্যহ রাতে শোবার আগে মাকালীর নাম স্মরণ করে এবং তার উদ্দেশ্যে প্রনাম করে এই মন্ত্র পাঠ বা শ্রবণ করবেন। দেখবেন অল্পদিনের মধ্যে এই মন্ত্রের শুভ ফলাফল আপনি দেখতে পাবেন।


মা কালীর অষ্টোত্তর শতনাম মন্ত্র // Maa Kali Astottara Satanama Mantra


করালিনী কালী মাগো কৈবল্যদায়িনী।

জগদম্বা নামে তুমি বিমুক্তকারিণী ।।

দুঃখনাশ কর বলে হলে দুঃখহারা।

জগতের মাতা তুমি হর-মনোহরা।। 

দনুজ দলন করি দনুজদলনী। 

দুর্গতিনাশিনী তুমি দেবী নারায়ণী।। 

দূর্গাসুর বধ করি দূর্গা নামে খ্যাতা। 

ত্রিলোচনী তুমি মাগো জগতের মাতা।। 

মুক্তি দান করি তুমি তাঁরা নাম ধর। 

তারিণী নামেতে তুমি জগৎ রক্ষা কর।।

পূর্ণব্রক্ষ্মময়ী তুমি ব্রক্ষ্মসনাতনী।       ( ( ১০ )

পরমা প্রকৃতি তুমি সৃজনকারিণী।।

বেদের সৃজন করি হলে বেদমাতা।

যোগমায়া নামে তুমি ত্রিলোকপালিতা।।

রুদ্রের ঘরণী বলে হলে রুদ্রজায়া। 

অম্বিকা নামেতে তুমি হলে মহামায়া।।

অপর্ণা তুমি মা কালী ত্রিলোকতারিনী।

অন্নপূর্ণা তুমি মাগো ত্রিলোকপালিনী।।

মায়া বিস্তারিয়া মাগো হলে মহামায়া।

বিপদে রেখো মা কোলে ওগো হরজায়া।।

মৃগনেত্র-সম বলি কুরঙ্গনয়নী। 

রণেতে প্রমত্ত বলি চণ্ডী মা জননী।।    ( ২০ )

শঙ্করের জায়া বলি হলে মা শঙ্করী।

ভব-জায়া বলি তুমি ভবানী ঈশ্বরী।।

ভীষণ আনন বলি করালবদনী।

দীনহীনে কর দয়া দনুজদলনী।।

কৃত্তিবাস হল বাবা বাগছাল পরি।

কৃত্তিবাস দারা তাই তুমি মা শঙ্করী।।

পাপ-বিনাশিনী কালী নৃমুন্ডমালিনী।

অধিনে কর মা দয়া তুমি কাত্যায়নী।।

কুলকুন্ডলিনী মাগো তুমি মহাসতী।

ষড়ৈশ্ব বলি নাম ভগবতী।।

জগত-জননী মাগো কালী কপালিনী।

কটিতে ঘুঙ্গুর পরি হলে মা কিঙ্কিণী।।

শঙ্কর কপালে ধরে হলেন কপালী।

কপালমালিনী তাই তুমি মহাকালী।।

কারণপ্রিয়া মা তুমি করণকারিকা।

এ দীনে কর গো দয়া তুমি মা কালিকা।।

থাকে না কালের ভয় তোমার শরণে।

কালক্ষয়-বিনাশিনী তাই লোকে ভণে।।

মেঘের বরণ তাই হলে কাদদ্বিনী।

কপালকুন্তলা কুন্দকুসুমধারিণী।।

জগতের আদি বলি নাম আদ্যাশক্তি।

অভয় চরণে যেন থাকে সদা ভক্তি।।

মহাবিদ্যা মহামায়া তুমি করালিনী।

প্রজাপতি মাতা তুমি কালী করালিনী।।

নিজ কায় কোষ বলি হলে মা কৌশিকী।

তোমার মায়ায় মুগ্ধ জগতের ভৌতিকী।।

ময়ূরবাহনে সাজ তুমি মা কৌমারী।

কালিকে কুটিলা দুর্গে তুমি মা কাবেরী।।

কালভয় নাশ কর তুমি কালপ্রিয়া।

তোমার অনন্ত লীলা মানব অজ্ঞা ।।

শঙ্করের প্রিয়া তাই নাম ভবদারা।       ( ৪০ )

কামাখ্যা কমলা তুমি ভবদুঃখহারা।।

শান্তিবিধায়িনী তুমি মহারুদ্রপ্রিয়া।

বধি শুম্ভ-নিশুম্ভাদি হইলে অজেয়া।।

কামদাত্রী নামে তুমি কামনা পূরাও।

মহেম্বরী নামে তুমি ভববক্ষে রও।।

কাল কাদম্বরী মাগো রাজ-রাজেশ্বরী।

ত্রিপুর-নাশিনী তুমি ত্রিপুরসুন্দরী।।

করুণাক্ষী হ‘লে তুমি বিতরি করুণা।

দীনহীনে কর দয়া অনন্ত-নয়না।।

ঈশান মহিষী তাই ইহতে ঈশানী। 

চণ্ডমুণ্ড বধ করি চামুণ্ডারুপিণী।।

ত্রিলোকের অধিষ্ঠাত্রী ত্রিলোক-ঈশ্বরী।

ত্রাণকর্ত্রী ত্রিনয়না ত্রিপুরাসুন্দরী।।

তুমি ক্ষুধা তুমি তৃষ্ণা বুদ্ধিস্বরুপিণী।   ( ৫০ )

সত্ত্বঃ রজঃ তমঃ ইতি ত্রিগুণধারিণী।।

তপোময়ী তুমি মাতা দানবদলনী।

ত্রিলোচন ত্রাণকর্ত্রী ত্রিলোকপালিনী।।

তত্ত্বপরায়ণী তুমি সর্বসিদ্ধিদাত্রী।

জগতপালন হেতু তুমি জগদ্ধাত্রী।।

দানিয়ে সারুপ্য মুক্তি হ‘লে নারায়ণী ।

ত্রিবলী-ধারিণী দুর্গে গুরুনিতম্বিনী ।।

ত্রিপুরদলনী দেবী লজ্জাস্বরুপিণী।

মহিষ অসুর বধি মহিষমদ্দিনী।।

জয় মাতঃ ত্রিনয়নী ত্রিফল স্বরুপা ।

লম্বোদর-জননী মাতা তাপিনী অনুপা।।

ত্রিলোকপালিনী তুমি সর্বপাপহরা ।

ত্রিশূলধারিণী কালী অর্দ্ধেন্দু-শেখরা।।

সদাই ষোড়শী তাই হইলে ষোড়শী।

অন্নপূর্ণা নামে তুমি থাক বারাণসী।।    ( ৬০ )

বরণ্যে বরদা সর্ব্বমঙ্গলা শিবানী ।

সর্ব্বেশ্বর সর্ব্বধার্ত্রী ত্রিগুণধারিণী।।

সাবিত্রী তুমি মা তাঁরা মুক্তিবিধায়নী।

শোকদুঃখ-বিনাশিনী তুমি মা সর্ব্বাণী।।

অশিবনাশিনী কালী দুর্গতিনাশিনী ।

ভগবতী সুরেশ্বরী অসুরঘাতিনী ।।

সহস্রাক্ষী সপ্তসতী শঙ্করী-ঈশ্বরী ।

বিদ্যাদাত্রী সুখপ্রদা তুমি শাকম্ভরী ।।

শবো‘পরি উপবিষ্ঠা সরোজবাসিনী।

ভূতপ্রেতসঙ্গিনী মা শ্মশানবাসিনী ।।

ধর্ম্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষফল-বিধায়িনী ।

তুমি মা কালীকে দুর্গে শ্রীকৃষ্ণা-জননী।।

অসুরাদি বধে দেবী রণ-উম্মাদিনী ।

সহস্রলোচনী তাঁরা দেবেন্দ্র জননী।।

কর মা করুণা দীনে দনুজদলনী ।

সুভগা সুমুখী শিবা তুমি ত্রিলোচনী।।

কলুষনাশিনী তুমি মুক্তিদায়িনী ।

সুবচনী তুমি তাঁরা মোচনকারিণী।।     ( ৭০ )

দশভুজা চতুর্ভুজা কভু অষ্টভুজা ।

অষ্টাদশভুজা আর কদাপি দ্বিভুজা।।

বহুরুপধারিণী তুমি দীনতারিণী ।

দীনহীনে কর দয়া মঙ্গলকারিণী।।

রক্তবস্ত্র-পরিধানা সুকেশী সুবেশী ।

রঙ্গপ্রাণনাথা তুমি দেবী এলোকেশী।।

সেতুবন্ধে হ‘লে মাগো তুমি রামেশ্বরী।

গোলোকে তুমি মা দুর্গে গোণোক ঈশ্বরী ।।

ব্রজধামে হ‘লে মাগো তুমি ব্রজেশ্বরী ।

হর-মনোহরা রমা মহেশী শঙ্করী ।।

ভবানী ভুবনেশ্বরী ভুবনমোহনী ।

ভূতারহারিনী তাঁরা ত্রিলোকতারিনী ।।

ভ্রূকুটি ভীষণা ভীমা তুমি ভয়ঙ্করী ।

ভবভয়হারিণী মা তুমি জয়ঙ্করী ।।

ভগবতী এলোকেশী তুমি ভগবতী ।

ভবেশবরণী দেবী তুমি ধূমাবতী ।।

ভিক্ষুক-গৃহিনী সাজ তাই মা ভিক্ষুকী ।

ত্রিনয়নী মুক্তকেশী ভারতী কৌশিকী।।

সৃষ্টিসংহারিণী কালী তুমি ছত্রেশ্বরী।

প্রলয়ে কর মা সৃষ্টি তুমি মহেশ্বরী ।।

নিজ-মুন্ড করি ছিন্ন হ‘লে ছিন্নমস্তা ।

কাতরে অভয়দানে হও ব্যগ্রহস্তা ।।     ( ৮০ )

ছলনা করিয়ে তুমি হ‘লে ছলবতী।

গিরিরাজ-সুতা তুমি দেবী হৈমবতী।।

শ্রীফলী তোমার নাম ধাত্রীফলপ্রিয়া।

শ্রীনিকেতনী নামেতে হ‘লে বিষ্ণুপ্রিয়া।।

মহাবিদ্যা রুপভেদে তুমি মহাসতী।

ধুম্রাক্ষনাশিনী তুমি হরের মোহিনী।

দীনহীনে কর দয়া তুমি নারায়ণী।।

ধানসী ধরিত্রী দেবী তুমি কাত্যায়নী।।

হরমনোহরা রম্য ধূর্জ্জুটিমোহিনী।।

ধনদাত্রী ধনহরা ধম্মবিধায়িনী।।

বগলা তুমি তুমি মা তাঁরা সুবুদ্ধিদায়িনী।।

বৈষ্ণবী বসুধা দূর্গে দুর্গতিনাশিনী।

মহেশী মদনোম্মতা মহিষঘাতিনী।।    ( ( ৯০ )

বিশালাক্ষী নামে তুমি বিশাললোচনা।

নিজগুণে গুণহীনে কর মা করুণা।।

শারদা শরতপ্রিয়া শিবসনাতনী।

বসুন্ধরা জগম্মাতা বরদা বারুণী।।

জলরুপে তুমি মাগো হও দ্রবময়ী।

ব্রক্ষান্ড উদরী তুমি,তুমি ব্রক্ষময়ী ।

বিশ্বমাতা বিশ্বময়ী তুমি এলোকেশী।

অকিঞ্চনে কর দয়া ওগো ব্যোমকেশী।।

বাগ্ বাদিনী তুমি মাতা তুমি বীণাপাণি।

তুমি মা পুরুষোত্তমে বিমলারুপিণী।

বহু রুপ ধর বলি মা তুমি বহুরুপিণী।

রণেতে দুর্জ্জয় মাগো দৈত্যবিনাশিনী।।

মাতঙ্গী তুমি মা তাঁরা ত্রিলোকপালিনী।

বিশ্বময়ী মহেশ্বরী মলয়বাহিনী।।       ( ( ১০০ )

ক্ষীণোদর বলি মাগো হ‘লে মন্দোদরী।

দীনহীনে কর কৃপা তুমি মহেশ্বরী।।

মধু আর কৈটভেরে করিয়া সংহার।

মধুকৈটভনাশিনী নাম যে তোমার।।

লক্ষীস্বরুপিণী তুমি, তুমি মা কমলা।

কুরুকুল্লা কপালিনী তুমি মা চঞ্চলা।।

বয়সে কিশোর সদা তাই মা কিশোরী ।

পীনোন্নত পয়োধরা কুমারী শঙ্করী ।।

গিরিরাজ-সুতা সতী কৈলাসবাসিনী ।

কল্যাণদায়িনী সদা তাই মা কল্যাণী ।।

গণেশ-জননী তুমি গিরিশ-নন্দিনী ।

হরমনোহরা রমা গিরীশমোহিনী ।।   ( ( ১০৮ )

কালী-শতনাম স্তোত্র হ‘ল সমাপন ।

আনন্দেতে হরিধ্বনি কর সর্ব্বজন ।।

এই শতনাম স্তব যে করে পঠন ।

ভক্তিভাবে কিম্বা যেই করিবে শ্রবণ ।।

ধনরত্নে তার গৃহে হইবে পূরণ ।

অন্তিম সময়ে পায় কালীর চরণ ।।

অনন্ত মহিমায় কালি-শতনাম ।

শ্রবণে পঠনে হয় সিদ্ধ মনস্কাম ।।

অপুত্রের পুত্র হয় নির্ধনের ধন ।

অন্তিম সময়ে পায় কালীর চরণ ।।

কালী বলে “কালী ব‘লে অন্তিম সময়।

কালীতে করুণাময়ী যেন প্রাণ যায়।।

তোমার অভয়পদে লইনু শরণ ।

দীন অকিঞ্চনে মাগো ক‘রো না বঞ্চন ।।

Leave a Comment