হিন্দুদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের মধ্যে অন্যতম হল রাম নবমী। চৈত্র মাসের নবমতম দিনে পালিত হয় রাম নবমী। এই দিনেই ত্রেতা যুগে ভগবান বিষ্ণু তার সপ্তম অবতারে রাম রুপে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে অযোধ্যার রাজা দশরথ ও রাণী কৌশল্যার পুত্র রূপে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীরামের জন্ম তিথি উৎযাপনের জন্য এই রাম নবমী পালিত হয়। এবছর রাম নবমী পড়েছে 30 মার্চ, বৃহস্পতিবার। আজ আমরা এই অংশে জানব রাম নবমীর সরল পুজো বিধি। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আপনি আপনার গৃহে কিভাবে রাম নবমীর সরল পুজো করবেন। প্রথমে জেনে নেওয়া যাক 2023 সালের রাম নবমীর পূর্নাঙ্গ সময়সূচী।
2023 সালের রাম নবমীর তারিখ ও সময় :
তারিখ : 30 মার্চ, 2023.
বার : বৃহস্পতিবার।
নবমী তিথি শুরু : 29 মার্চ, 2023.
সময় : রাত 9 টা।
নবমী তিথি শেষ : 30 মার্চ, 2023.
সময় : 11:40 মি।
রাম নবমীর সরল পুজো বিধি :
রাম নবমীর দিন সকালে উঠে স্নান করে কোন শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে পুজোর জন্য প্রস্তুত হবেন। এরপর কোন ছোট চৌকি বা টুলের উপর লাল আসন বিছিয়ে নেবেন খুব সুন্দর করে। সেই চৌকি ও লাল আসন গঙ্গা জল ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নেবেন এবং কিছু ফুল সেই আসনে ছিটিয়ে দেবেন। এরপর সেই আসনে রাম দরবারের মূর্তি বা ছবি রাখবেন এবং তার সামনে গণেশের মূর্তি বা ছবি রাখবেন। এরপর সেই স্থানটি খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে তুলবেন।
এরপর বাম হাতে কুঁশোকুশি থেকে গঙ্গা জল নিয়ে আচমন করে নেবেন। কিভাবে আচমন করতে হয়? আপনি বাম হাতে জল নিয়ে তিনবার নিজের মাথায় এবং তিনবার নিজের মুখে নমঃ বিষ্ণু, নমঃ বিষ্ণু, নমঃ বিষ্ণু বলতে বলতে গঙ্গাজল ছিটিয়ে নেবেন। এরপর আপনি রাম দরবারের ছবি বা বিগ্রহটিকে কোন পরিস্কার কাপড়ে জল নিয়ে মুছে নিতে হবে। আপনি পঞ্চামৃত দিয়েও স্নান করাতে পারেন। এরপরে চন্দন বেঁটে চন্দনের তিলক পরিয়ে দেবেন ছবির প্রত্যেকে। সঙ্গে গণেশের মূর্তিতেও কিন্তু চন্দন দিতে হবে। চন্দন পরাতে পরাতে ” জয় শ্রীরাম ” মন্ত্র জপ করবেন। এরপর ঘিয়ের প্রদীপ ও ধূপ জ্বালাবেন এবং সেগুলো ঠাকুরকে দেখাবেন। এরপর গণেশের মূর্তি বা ছবিতে এবং রাম দরবারের ছবি বা মূর্তিতে চন্দন সহযোগে মালা পরিয়ে দিতে হবে। আপনাররা মালা গুলোতে একটু বেঁটে রাখা চন্দন ছিটিয়ে তারপর মালা পরাবেন। এরপর রামচন্দ্রকে পৈতে অর্পন করবেন। একটি ফুলে চন্দন ছিটিয়ে সেটি সিদ্ধিদাতা গণেশের চরনে ” এতে গন্ধ পুষ্পে, ওঁ গং গণেশায় নমঃ ” মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে নিবেদন করবেন। এরপর আবার গণেশের চরণে লাল ফুল ও দুর্বা অর্পণ করবেন। এরপর রাম দরবারের ছবি বা মূর্তির চরনে ফুল ও তুলসী পাতা তাতে চন্দন ছিটিয়ে নিবেদন করবেন “জয় শ্রীরাম” মন্ত্র জপ করতে করতে। এরপর ছবির প্রতিটি ভগবানের উদ্দেশ্যে চন্দন ছিটিয়ে ফুল অর্পণ করবেন এবং যদি সম্ভব হয় হনুমানজীকে লাল ফুল অর্পন করবেন। প্রতিটি মাথায় রাখবেন রাম হলেন বিষ্ণুর অবতার তাই তুলসীপত্র ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ কিন্তু ভুল করেও গণেশকে তুলসী পাতা দেবেন না। আপনি এবার আপনার সাধ্যমত ভোগ অর্পণ করবেন। ভোগে মিষ্টি এবং মরসুমি ফল হলে খুব ভাল হয়। অর্পণ করবার আগে ভোগে গঙ্গাজল ছিটিয়ে নেবেন এবং একটু ফুল ও তুলসী পাতা ছিটিয়ে নেবেন। গণেশজীকে লাড্ডু অর্পণ করবেন এবং ফুল কিছুটা ছিটিয়ে নিবেদন করবেন। এরপরে আপনি শ্রীরাম চন্দ্রের ধ্যান মন্ত্র তারপর প্রনাম মন্ত্র, শ্রীরাম চালিশা ইত্যাদি মন্ত্র জপ করতে পারেন। তারপর যদি একটু সময় নিয়ে কিছুক্ষণ রামায়ণ পাঠ করতে পারেন তাহলে খুবই ভাল হয়। আপনি মন্ত্র জপ করতে না পারলেও কিছুক্ষণ শ্রীরামের নামে ধ্যান করবেন এবং ” জয় শ্রী রাম ” বা ” জয় সীতারাম ” মন্ত্র জপ করবেন। সবশেষে আপনি কপ্পূরের আরতী করবেন। এরপর পরিবারের সবাই মিলে বসে রামায়ণ পাঠ শ্রবণ করবেন।
আগামী রাম নবমীর দিন এই সম্পূর্ণ সরল পুজো বিধি বাড়িতে পালন করলে আপনার বাড়ি থেকে সকল নেতিবাচক শক্তি দূর হবে, পরিবারের সকল সদস্যদের মধ্যে ভাব ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে, সংসারে অর্থাভাব কেটে যাবে, কর্মক্ষেত্রে অসীম উন্নতি হবে এবং সর্বোপরি শ্রীরাম ও বজরংবলীর বিশেষ কৃপা পাবেন।