Mangalvar Vrat Katha // Mangalvar Hanuman Puja Vidhi // Importance of Mangalvar Brat of Lord Hanuman
বজরংবলীর বিশেষ কৃপা লাভের জন্য অবশ্যই পালন করতে হবে “বজরংবলীর মঙ্গলবারের ব্রত “। হনুমানজীকে আরাধনায় এই বিশেষ ব্রত পালনে মেলে তার আশির্বাদ। এখানে আপনারা পড়বেন কি এই মঙ্গলবার ব্রত,মঙ্গলবার ব্রত পালনের লাভ বা মাহাত্ম্য,এই ব্রত পালনের নিয়ম বা পুজো বিধি এবং সাবধানতা এবং হনুমানজীর মঙ্গলবার ব্রত কথা।
মঙ্গলবার ব্রত পালনের লাভ বা মাহাত্ম্য :
আপনারা সকলেই জানেন তুলসীদাসজী তার লেখা হনুমান চালিশায় বলেছেন ” চারো যুগ প্রতাপ তুমহারা” অর্থাৎ সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর এবং কলি যুগেও হনুমানজির প্রতাপ বর্তমান রয়েছে। নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে তাকে ডাকলে তাকে সর্বদা পাওয়া যায়। তিনি যে কোনো সঙ্কট থেকে আমাদের রক্ষা করেন। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে যে ব্যক্তি মঙ্গলবার হনুমানজির ব্রত রাখেন তার কুন্ডলীতে সকল গ্রহ শান্ত থাকে অর্থাৎ সেই ব্যক্তি সকল গ্রহ প্রীড়া থেকে মুক্তি পান। সকল নেতিবাচক শক্তি দূর হয়ে যায়,ভূত-প্রেতে বা কালা যাদুর কোন প্রভাব তার বা পরিবারের কারো উপরে পড়ে না। সংসারে সুখ সমৃদ্ধি ও ধন-দৌলতের প্রাপ্তি হয়।সন্তান প্রাপ্তির জন্য এই ব্রত অত্যন্ত ফলদায়ক। ভবিষ্যতে আগত যে কোনো সঙ্কট থেকে রক্ষা পান এই ব্রত পালনকারীরা। এই ব্রত পালনকারীর সকল মনস্কামনা পূরণ হয়। মন নিঃরোগ ও শান্ত থাকে। এই ব্রত পালন কারীর উপর বজরংবলীর বিশেষ কৃপা দৃষ্টি সারাবছর বজায় থাকে।
মঙ্গলবার ব্রত পালনের নিয়ম বা পুজো বিধি :
হনুমানজির মঙ্গলবার ব্রত টানা 21 মঙ্গলবার করতে হয়। মঙ্গলবার ভোরে উঠে যদি সম্ভব হয় ব্রহ্ম মুহুর্তে উঠে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করবেন। লাল রঙের বস্ত্র পরিধান করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। স্নান সেরে আপনি বাড়ির ঈশান কোনে অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব কোণে হনুমানজির ছবি বা মূর্তি উঁচু কোনো আসনে লাল কাপড়ের উপর স্থাপন করে রামচন্দ্রের নাম নিয়ে তারপর হনুমানজির ধ্যান করুন কিছুক্ষণ এবং আপনি মঙ্গলবার ব্রত পালনের সংকল্প গ্রহণ করুন। এইবার হনুমানজি সিঁদুর অর্পণ করুন এবং তার সামনে চামেলি তেলের প্রদীপ জ্বালান সঙ্গে হনুমানজিকে সাধ্যমত ভোগ নিবেদন করুন। ভোগে কিন্তু তুলসী পাতা দিতে ভুলবেননা।তুলসী পাতা ছাড়া কিন্তু হনুমানজীর ভোগ অসম্পূর্ণ। এরপর আপনি হনুমানজীকে ফুল অর্পন করুন এবং ধূপ ও প্রদীপ দেখান এবং প্রভুকে আপনার মনোঃস্কামনা জানান। এরপর ফুল হাতে মঙ্গলবার ব্রত কথা পাঠ করুন বা শ্রবণ করুন। তারপর হনুমান চালিশা এবং সুন্দরকান্ড পাঠ করুন সুন্দরকান্ড পাঠ সম্পূর্ণ সম্ভব না হলে প্রতি মঙ্গলবার কিছুটা করে অংশ পাঠ করুন। এরপরে শ্রীরাম এর উদ্দেশ্যে ও বজরংবলী কে প্রণাম জানিয়ে উঠে আপনার নিবেন করা প্রসাদ সকলের মধ্যে বিতরণ করুন। ওই দিন সন্ধ্যাবেলা হনুমান মন্দিরে গিয়ে তেলের প্রদীপ জ্বালান এবং হনুমান চালিশা পাঠ করবেন।
মঙ্গলবার ব্রত পালনে কিছুটা বিধিনিষেধ আপনাকে মেনে চলতে হবে যেমন :
১) ঐদিন অবশ্যই নিরামিষ আহার গ্রহণ করবেন। যদি সম্ভব হয় ঐদিন একবার আহার গ্রহণ করবেন এবং সারাদিন ফলমূল গ্রহণ করতে পারেন।
২ ) ওই দিন কিন্তু কোন প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না।
৩) নিচের আচার-বিচার শুদ্ধ রাখবেন।
৪) সারাদিন ঐদিন কাউকে কোনো রকম খারাপ ব্যবহার করবেন না বা খারাপ কথা বলবেন না।
৬) আপনার সাধ্য মত ঐদিন দান ধ্যান করুন।
ওইভাবে 21 মঙ্গলবার ব্রত পালন করবার পর 22 তম মঙ্গলবার বিধি মেনে হনুমানজীর পূজা করুন।
হনুমানজীর মঙ্গলবার ব্রত কথা :
কোন এক সময়ে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ দম্পতি এক বনে বাস করতেন। তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ছিল কিন্তু তাদের কোন সন্তান না থাকার কারণে তাদের মধ্যে সন্তানহীনতার এক দুঃখ ছিল। ব্রাহ্মণ প্রতি মঙ্গলবার বনে গিয়ে হনুমানজীর পূজা করতেন এবং সন্তান প্রাপ্তির প্রার্থনা করতেন। ব্রাহ্মণ পত্নীও হনুমানজির অনেক বড় ভক্ত ছিলেন এবং মঙ্গলবার করে তার পূজা করতেন। তিনি প্রতি মঙ্গলবার হনুমানজিকে ভোগ নিবেদন করে তবেই আহার গ্রহণ করতেন। এক মঙ্গলবার কোন কারণে তিনি হনুমানজিকে ভোগ নিবেদন করতে পারলেন না। তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হলেন এবং সংকল্প গ্রহণ করলেন যে আগামী মঙ্গলবার হনুমানজিকে ভোগ নিবেদন করে তবেই আহার গ্রহণ করবেন। তিনি তার সংকল্প মত আগামী ছয় দিন উপবাস ছিলেন কিন্তু আগামী মঙ্গলবার তিনি হনুমানজীর পূজা করার সময় অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। ব্রাহ্মণ পত্নীর নিষ্ঠ দেখে হনুমানজি প্রসন্ন হয়ে তার সামনে প্রকট হলেন এবং আশীর্বাদ স্বরূপ তাকে এক সন্তান প্রদান করলেন। ব্রাহ্মণী অত্যন্ত খুশি হলেন এবং সেই সন্তানের নাম রাখলেন মঙ্গল। কিছু সময় পরে ব্রাহ্মণ ঘরে এলেন এবং ঘরে বাচ্চার আওয়াজ শুনে আশ্চর্য হয়ে ব্রাহ্মণীকে বাচ্চা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। ব্রাহ্মণী সবকিছু খুলে বললেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ তার কথা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করলেন না। ব্রাহ্মণের সন্তানের প্রতি ঘৃণা জন্মাতে থাকলো ধীরে ধীরে। একবার ব্রাহ্মণপত্নী একদিন যখন ঘরে ছিলেন না তখন ব্রাম্মন পুত্র মঙ্গলকে কুয়োতে ফেলে দিলেন। ব্রাহ্মণপত্নী বাড়ি ফিরে মঙ্গল কোথায় জানতে চাইলেন ব্রাহ্মণের কাছে। ব্রাহ্মণ কিছু বলার আগেই মঙ্গল মুচকি হাসতে হাসতে সেখানে এসে উপস্থিত হলে ব্রাহ্মণ আশ্চর্য হয়ে যায়। ব্রাহ্মণ ভাবতে থাকে,যে বাচ্চাকে আমি নিজে হাতে কুয়োতে ফেলে দিলাম সে জীবিত হয়ে উঠে এলো কি করে। রাতে স্বপ্নে হনুমানজি ব্রাহ্মণ কে দর্শন দিয়ে বললেন এই সন্তান তোর। আমি ব্রাহ্মণীর আমার প্রতি নিষ্ঠা ও ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে তাঁকে আশীর্বাদ স্বরূপ দিয়েছি। এরপর থেকে ওই ব্রাহ্মণ দম্পতি প্রতি মঙ্গলবার হনুমানজির ব্রত পালন করতে লাগলেন।