দুঃখ,দরিদ্রতা জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলতে পাঠ করুন শিব দারিদ্র্য দহন স্তোত্র

জীবনে দুঃখ, দারিদ্রতা, হতাশা দূর করতে নিত‍্য পাঠ করুন শক্তিশালী শিব মন্ত্র দারিদ্র্য দহন শিব স্তোত্রম। ঋষি বশিষ্ঠ রচিত এই শিব স্তোত্রম পাঠে সকল প্রকার দুঃখ, দরিদ্রতা দূর করে যা এই স্তোত্রের প্রতিটি শ্লোকের শেষ পংক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। এই শিব দারিদ্র্য দহন স্তোত্রমের অর্থসহ আজ আমরা জানব কিভাবে স্তোত্র পাঠ করতে হয়, কতবার পাঠ করতে হয়, কখন পাঠ করতে হয়, এই মন্ত্র পাঠ করবার উপকারিতা ইত্যাদি।

দারিদ্র্য দহন শিব স্তোত্রম পাঠের উপকারিতা :

ভগবান শিব খুব অল্পতেই তুষ্ট। তিনি ভক্তের সকল দুঃখ কষ্ট দূর করেন। এই শক্তিশালী মন্ত্র পাঠে ভক্তের –

১. মহামৃত‍্যুঞ্জয় মন্ত্রের মতই এই মন্ত্র সকল রোগ নিবারন করে এবং যারা নিত‍্য জপ করেন তাদের শরীরে কোন রোগ ব‍্যাধি বাসা বাঁধতে পারে না।
২. সকল দরিদ্রতা নাশ করে এবং অর্থ লাভ হয়। এই মন্ত্রটি হল দরিদ্রতা নাশক মন্ত্র। এই মন্ত্রের প্রতিটি পংতির শেষে ভগবান শিবের কাছে দুঃখ ও দারিদ্র দূর করবার জন‍্য প্রার্থনা করা হয়েছে।
৩. এই শক্তিশালী শিব স্তোত্র পুত্রপৌত্রাদি বর্ধনকারী অর্থাৎ এই মন্ত্র পাঠে পরিবারে বংশ বৃদ্ধি হয়।
৪. সকল দুঃখ, কষ্ট, দারিদ্রতা, হতাশা দূর করে দারিদ্র্য দহন শিব স্তোত্রম নিয়মিত পাঠ। 
৫. এই স্তোত্র পাঠে ভক্তের সকল সুখ লাভ হয় এবং মৃত্যুর পর স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়।

দারিদ্র্য দহন শিব স্তোত্রম

বিশ্বেশ্বরায় নরকার্ণব তারণায়
কর্ণামৃতায় শশিশেখরধারণায় ।
কর্পূরকান্তিধবলায় জটাধরায়
দারিদ্র্য দুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ॥১॥

ভাবার্থ :

যিনি নিজ মস্তকে চন্দ্রকে ধারণ করেছেন, যার নাম কর্ণের অমৃতস্বরূপ, যিনি নরক থেকে উদ্ধারকারী, যাঁর কান্তি কর্পূর ও কুন্দের ন্যায় ধবল, সেই জটাধারী দারিদ্র্য দুঃখহরণকারী বিশ্বেশ্বর শিবকে প্রণাম জানাই।

গৌরীপ্রিয়ায় রজনীশকলাধরায়
কালান্তকায় ভুজগাধিপকঙ্কণায়
গঙ্গাধরায় গজরাজ বিমর্দনায়
দারিদ্র্য দুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ॥ ২॥

ভাবার্থ :

যিনি গৌরী প্রিয়,যিনি চন্দ্রের কলা ধারণ করেছেন, যিনি কালের কাল, নাগরাজ যাঁর কঙ্কণ, যিনি গঙ্গাকে ধারণ করেন, যিনি গজরাজের বিমর্দনকারী, সেই দারিদ্র্য দুঃখহরণকারী শিবকে প্ৰণাম জানাই জানাই।

ভক্তিপ্রিয়ায় ভবরোগভয়াপহায়
উগ্রায় দুর্গভভবসাগরতারণায় ৷
জ্যোতির্ময়ায় গুণনামসুনৃত্যকায়
দারিদ্র্য দুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ॥ ৩॥

ভাবার্থ :

যিনি সংসাররূপ রোগের ভয় নাশ করেন, উগ্র, দুরধিগম্য ভবসাগর পারকারী, জ্যোতির্ময় ও পুনর্জন্মের নিবারক,ভক্তিতে প্রীত, সেই দারিদ্র্য দুঃখহরণকারী শিবকে প্রণাম জানাই।

চর্মাম্বরায় শবভস্মবিলেপনায়
ভালেক্ষণায় মণিকুণ্ডলমণ্ডিতায়৷ মংঝীরপাদযুগলায় জটাধরায়
দারিদ্র্য দুঃখদহনায় নমঃ শিবায়॥ ৪॥

ভাবার্থ :

যিনি চর্ম পরিহিত,যিনি শব ভস্ম নিজ শরীরে লেপন করেন, ললাটে যাঁর জ্ঞানচক্ষু, সর্প যাঁর ভূষণ,যাঁর পাদদ্বয়ে নুপূর এবং যিনি জটাধারী,সেই দারিদ্র্য দুঃখহরণকারী শিবকে প্রণাম জানাই।

পঞ্চাননায় ফণিরাজবিভূষণায়
হেমাংশুকায় ভুবনত্রয়মণ্ডিতায়।
আনন্দভূমি-বরদায় তমোময়ায়
দারিদ্র্য দুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ॥ ৫॥

ভাবার্থ :

যিনি পঞ্চমুখ বিশিষ্ট,যিনি সর্পরাজের দ্বারা বিভূষিত, যিনি ত্রিভুবনের শোভাদায়ক, যিনি আনন্দের আশ্রয় এবং বরদাতা, যিনি তমোনাশক, যাঁর উত্তরীয় স্বর্ণময়,সেই দারিদ্র্য দুঃখহরণকারী শিবকে প্রণাম জানাই।

ভানুপ্রিয়ায় ভবসাগরতারণায়
কালান্তকায় কমলাসনপূজিতায়।
নেত্রত্রয়ায় শুভলক্ষণলক্ষিতায়
দারিদ্র্য দুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ॥ ৬॥

ভাবার্থ :

যিনি সূর্য প্রিয়,যিনি পাপ হরণকারী, যিনি কালের কাল, যিনি ব্রহ্মার দ্বারা পূজিত হন,জগতের যিনি মঙ্গলকর্তা, যাঁর ত্রিনয়ন বর্তমান সেই দারিদ্র্য দুঃখহরণকারী শিবকে প্রণাম জানাই।

রামপ্রিয়ায় রঘুনাথবরপ্রদায়
নাগপ্রিয়ায় নরকার্ণবতারণায় ।
পুণ্যেষু পুণ্যভরিতায় সুরার্চিতায়
দারিদ্র্য দুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ॥ ৭॥

ভাবার্থ :

যিনি শ্রীরামচন্দ্রের প্রিয়, যিনি রঘুনাথের বরদাতা, যিনি নাগদের অতি প্রিয়, কৈলাস যাঁর নিবাস, যিনি ত্রিলোকের পুণ্যচরিত, যিনি পবিত্র এবং দেবপূজিত সেই দারিদ্র্য দুঃখহরণকারী শিবকে প্রণাম জানাই।

মুক্তেশ্বরায় ফলদায় গণেশ্বরায়
গীতপ্রিয়ায় বৃষভেশ্বরবাহনায় ।
মাতঙ্গচর্মবসনায় মহেশ্বরায়
দারিদ্র্য দুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ॥ ৮॥

ভাবার্থ :

যিনি মুক্তিদাতা,ফলদাতা, গণসমূহের ঈশ্বর,যিনি সঙ্গীত প্রিয়, যাঁর বাহন ষাঁড়,যার বসন হস্তীচর্ম,
যিনি মহেশ্বর, সেই দারিদ্র্য দুঃখহরণকারী শিবকে প্রণাম জানাই।

গৌরীবিলাসভুবনায় মহোদয়ায়
পঞ্চাননায় শরণাগতরক্ষকায়।
শর্বায় সর্বজগতামধিপায় তস্মৈ
দারিদ্র্যদুঃখদহনায় নমঃ শিবায় ।। ৯।।

ভাবার্থ :

যিনি মহানুভব মুক্তিদাতা,শরণাগতের আশ্রয় প্রভু, গৌরীর বিলাসভূমি, যাঁর পঞ্চবদন, যিনি প্রলয়কর্তা, সমস্তজগতের প্রভু, সেই দারিদ্র্য দুঃখদহনকারী শিবকে প্রণাম ।

বসিষ্ঠেন কৃতং স্তোত্রং সর্বরোগনিবারণম্। সর্বসম্পকরং পুণ্যং পুত্রপৌত্রাদিবর্ধনম্।
ত্রিসন্ধ্যং যঃ পঠেন্নিত্যং স হি স্বৰ্গমবাপুয়াৎ ।৷ ১০।।

ভাবার্থ :

বশিষ্ঠ কৃত এই স্তোত্রগুলি সমস্তরোগ নিবারণকারী, সমস্ত সম্পদ উৎপাদনকারী পুণ্যার্জনকারী, পুত্রপৌত্রাদি বর্ধনকারী। নিত্য ত্রিসন্ধ্যা যিনি এই স্তোত্র পাঠ করেন তার স্বর্গলোক প্রাপ্তি ঘটে।

এই মন্ত্র পাঠের বিধি বা নিয়ম :

আপনি  এই মন্ত্র প্রতিদিন জপ করতে পারেন। তবে আপনার পক্ষে যদি প্রতিদিন জব করা সম্ভব না হয় তাহলে প্রতি সোমবার এই মন্ত্র জপ করতে পারেন। তবে আপনি যদি অত্যন্ত দরিদ্রতায় ভুগছেন অথবা দুঃখ-কষ্ট আপনাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছে তাহলে আপনারা প্রতি মাসের মাসিক শিবরাত্রিতে রাত্রিবেলা শিবলিঙ্গে আখের রসের অভিষেক করাবেন এবং এই স্তোত্র জব করবেন। তারপর আবার শিবলিঙ্গ কে ভালোভাবে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে তার স্থানে রাখবেন এবং ভষ্ম ও চন্দন লেপন করবেন। যদি সম্ভব হয় 108 বার এই দারিদ্র্য দহন শিব স্তোত্রম পাঠ করবেন যদি সম্ভব না হয় তাহলে আপনি একবার জব করলেই হবে। আপনারা মাসিক শিবরাত্রির দিন যদি অনুষ্ঠান করেন তাহলে রাতের বেলা করলে ভালো হয় তবে দিনের বেলাতেও করতে পারেন। আপনাদের বলে রাখি প্রতি মাসে কিন্তু একটি করে শিবরাত্রি আসে এবং ফাল্গুন মাসের যে শিবরাত্রি পালিত হয় তাকে বলা হয় মহাশিবরাত্রি। আপনারা মাসিক শিবরাত্রির দিন এই বিশেষ অনুষ্ঠান করতে পারলে খুব ভালো হয় তবে আপনারা যদি প্রতিদিন বা প্রতি সোমবার এই মন্ত্র জপ করতে চান তাদের এমনি শিবলিঙ্গের নিত্য পূজার সময় জল ঢালতে ঢালতে এই মন্ত্র পাঠ করবেন।

দারিদ্র্য দহন শিব স্তোত্রম পাঠের Video দেখুন আমাদের YouTube Channel এ :


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *