আমরা সকলে আমাদের গৃহে নিত্য পুজো করি। পুজোর সময় আমরা ভগবানের সামনে দ্বীপ প্রজ্জ্বলিত করে থাকি। কিন্তু ভগবানের বিগ্রহের সামনে দ্বীপ জ্বালানোর শাস্ত্রীয় বিধান আপনার জানা রয়েছে কি? জানেন কি কোন নিয়মে পুজোর সময়ে দ্বীপ প্রজ্জ্বলিত করলে আপনার পুজো খুব সহজেই সফল হয় এবং আপনার মনোবাসনাও পূর্ণ হয় তাড়াতাড়ি। আবার ভুল নিয়মে পুজোর সময় প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করলে হত পারে সর্বনাশ।
আজ আপনারা এই অংশে পুজোর সময় প্রদীপ অর্পণের শাস্ত্রীয় বিধান এবং মন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানবেন। আরও জানবেন ভগবানের সামনে প্রদীপ অর্পণের কিছু বিশেষ কার্যকর উপায় যা আপনারা পালন করলে আপনার ঘরে অর্থ আগমনের পথ সুগম হবে, পরিবারে সকল বাধা দূর হবে, ঘরের সকল নেগেটিভ শক্তি বিনাশ হবে।
পুজোর সময় দ্বীপ দানের রীতি চলে আসছে অনেক কাল আগে থেকেই। এই প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ছাড়া পূজো অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। আপনারাও হয়ত পুজোর সময় প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেন। কিন্তু কিছু বিশেষ নিয়মে প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করবার নিয়ম রয়েছে। অনেকে বিগ্রহের সামনেই প্রদীপ প্রজ্বলিত করে রেখেদি। অথবা প্রদীপ বিগধহের ডান দিকে বা বাঁম দিকে বা যেখানে সেখানে রেখে দেন। তা করা কিন্তু অত্যন্ত ভুল। এ নিয়ে আমাদের শাস্ত্রে খুব স্পষ্ট ভাবে বলা রয়েছে। যেমন :
দেবস্য দক্ষিণে ঘৃত দীপম।
বামে তৈল দীপম চ স্তাপয়েত।।
অর্থাৎ ভগবানের দক্ষিণ দিকে মানে ডান দিকে ঘিয়ের প্রদীপ এবং বাম দিকে তেলের প্রদীপ প্রজ্বলিত করতে হয়। অর্থাৎ আপনার বাম হাতে ঘিয়ের প্রদীপ এবং ডান হাতে তেলের প্রদীপ প্রজ্বলিত করতে হবে। অপনারা চাইলে তেল এবং ঘি দুটো প্রদীপই প্রজ্জ্বলিত করতে পারেন।
এবার বলি কোন প্রদীপ প্রজ্বলিত করবার সময় কোন মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয় :
আপনারা ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করবার জন্য ওঁ উচ্চারণ করবেন এবং তেলের দ্বীপ জ্বলানোর সময় আপনারা আইম উচ্চারণ করতে পারেন বা ক্লীম উচ্চারণ করতে পারেন বা যেকোন বীজ মন্ত্রের উচ্চারণ করতে পারেন।
এখন প্রশ্ন হল সেই দ্বীপ কতক্ষণ প্রজ্জ্বলিত থাকতে হবে?
এ ব্যাপারে শাস্ত্রে বলা হয়েছে :
ওঁ শ্রীং হ্রীং ক্লীং দীপদেবী মহাদেবী শুভম ভবতু মে সদা।
যাবত পূজা সমাপ্তিস্থ স্থাবত প্রজ্জ্বল সুস্থিরা ॥
অর্থাৎ যতক্ষন পর্যন্ত পুজো বর্তমান থাকবে ততক্ষন আপনার দ্বীপ প্রজ্জ্বলিত থাকবে। অর্থাৎ পুজো যতক্ষন করবেন ততক্ষন প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত থাকবে।
মাথায় রাখবেন আপনারা ভগবানের সামনে যে দ্বীপ অর্পণ করি সেই দ্বীপের আভা কিন্তু ভগবানের বিগ্রহ বা ছবির গায়ে লেগে তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এর আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য কতটা আপনারা অনুধাবন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। এই আভা কতটা শক্তিশালী তা হয়ত আপনাদের আলাদা করে বলে দিতে হবে না।
আপনারা ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করবার সময় তাতে একটু কেশর দিয়ে দিন আপনার নিত্য পুজো করবার সময়। এতে আপনার কোনদিন অর্থের অভাব থাকবে না। আপনার ঘরে এত অর্থ আসবে আপনি ভাবতেও পারছেন না।
আবার আপনি যখন প্রদীপ অর্পণ করবেন তখন সেই প্রদীপ কখনই খালি মাটিতে রাখতে নেই। আপনি কোন পাত্রের ওপর কিছু চাল রেখে তার ওপর প্রদীপটি রাখবেন। সম্ভব হলে প্রতিদিন প্রদীপ পরিষ্কার করবেন এবং প্রদীপের সলতে বদলাবেন। কখনই প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের থেকে অন্য প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করবেন না। এই কাজটি কিন্তু অত্যন্ত ভুল কাজ। এতে অনেক খারাপ হয়ে যেতে পারে।
আপনি যদি ঘরে হনুমানজীর পুজো করেন তাহলে শনিবার বা মঙ্গলবার চামেলীর তেলের প্রদীপ অর্পণ করুন এবং সেই প্রদীপে দুটো নিঁখুত লবঙ্গ অর্পণ করবেন। এতে আপনার ঘরের সকল নেগেটিভ শক্তি দূর হবে এবং আপনার মনোবাসনা পূরণ হবে।
আপনি যদি শনির প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত থাকেন এবং আপনার যদি শণির সাড়ে সাতি বা ঢাইয়া চলে তাহলে প্রতি শনিবার কোন শনি মন্দিরে গিয়ে তিলের তেলের প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন। শনির প্রকোপ থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাবেন।
শাস্ত্র অনুসারে সন্ধেবেলায় তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালানো অত্যন্ত জরুরি। সন্ধেবেলা তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালালে গৃহে অশুভ শক্তি প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া যিনি তুলসীতলায় প্রতিদিন প্রদীপ জ্বালান, তাঁর জীবনের সমস্ত সমস্যা দূর হয়। তুলসীর কৃপায় সুখ ও সমৃদ্ধিতে তাঁর জীবন ভরে ওঠে।
অশ্বথ গাছের নীচেও প্রদীপ জ্বালানো অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। প্রতি অমাবস্যায় অশ্বথ গাছের নীচে একটি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে আসুন। এর ফলে আপনার প্রয়াত পূর্ব পুরুষের আশীর্বাদ আপনার ওপরে থাকবে। এছাড়া টানা ৪১ দিন ধরে অশ্বথ গাছের নীচে সর্ষের তেলের প্রদীপ জ্বালালে জীবনের সমস্ত ইচ্ছে পূরণ হবে।