দশ মহাবিদ্যা এবং তাদের মন্ত্র
ছবি ক্রেডিট: উইকিপিডিয়া।
দশ মহাবিদ্যা হল হিন্দু ধর্মের এমন এক রহস্য যার সম্পর্কে শুনে থাকলেও আপনি এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানেন না। আজ আমরা এই লেখাতে পড়ব হিন্দু ধর্মের এই মহাবিদ্যা সম্পর্কে। বিস্তারিত ভাবে জানব দশ মহাবিদ্যার প্রতিটি বিদ্যাকে এবং জানব এই মহাবিদ্যার বীজমন্ত্র ।
তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই দশ মহাবিদ্যা আসলে কি?
দশ মহাবিদ্যা হল মাতা পার্বতীর দশটি রূপ। খুব ভালভাবে বলতে মাতা পার্বতীর পূর্বের অবতার মহাদেব পত্নী সতীর দশ রূপ।
তাহলে এই দশ মহাবিদ্যার রূপগুলি কি কি এবং কেনই বা সতীকে এই দশ রূপ ধরতে হয়েছিল?
আসুন এই প্রশ্নটির উওর খুঁজি।
দশ মহাবিদ্যার দশটি রূপ কি কি ? সতীর এই দশটি রূপ হল :
1.কালী।
2.তারা।
3.ত্রিপুর সুন্দরী।
4. ভুবনেশ্বরী।
৫.ভৈরবী।
৬.ছিন্নমস্তা।
7. ধূমাবতী।
8.বলামুখী।
9.মাতাঙ্গী।
10. কমলা।
এবার তাহলে বলি কেন সতীকে তার দশ রুপ ধারন করতে হয়েছিল?
এনিয়ে এক পৌরাণিক গল্প রয়েছে। পিতা দক্ষের চরম অমতে সতী বিবাহ করেন মহাদেব শিবকে। একবার রাজা দক্ষ তার প্রাসাদে এক মাহাযোজ্ঞের আয়োজন করেন। কিন্তু তাতে তিনি শিব এবং সতীকে আমন্ত্রণ জানান নি। এই মাহা যোজ্ঞের অনুষ্ঠানে যাবার জন্য সতী স্বামী মহাদেবের কাছে যাবার জন্য জেদ করতে ধাকে। মহাদেব সেখানে যাবার পরিণতি কি হতে পারে অনুধাবন করে তিনি সতীকে সেখানে যেতে বারন করেন। এতে সতী ক্রুদ্ধ হয়ে কালী রুপ ধারন করে মহাদেবের ওপর অগ্নি বর্ষণ করতে থাকে। মহাদেব তাতে গুরুত্ব না দিয়ে আবার ধ্যানমগ্ন হলে সতী তাকে দশ দিক থেকে দশ রুপ ধারন করে ঘিরে ফেলে। মহাদেব তার চরম অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতীকে সেখানে যাবার অনুমতী প্রদান করেন।
এবার তাহলে জেনেনি এই মাতা পার্বতীর পূর্ব অবতার সতীর দশ রুপ সম্পর্কে এবং তাদের বীজ মন্ত্র গুলো :
কালী : দশ মহাবিদ্যার প্রথম বিদ্যা বা রুপ হল মা কালী। তিনি দেবী দূর্গার আরেক রুপ। মা কালীকে আমরা শ্যামা বা আদ্যাশক্তি নামেও জেনে থাকি। সতীর এই রুপ সৃষ্টি, ধ্বংস এবং শক্তির দেবী। মহাদৈত্যদের বধ করবার জন্য এই রুপ ধারন করেছিলেন মা সতী।
মা কালীর মন্ত্র : ওম ক্রিম ক্রিম ক্রিম হুম হুম হ্রীম হ্রীম দক্ষিণে কালিকে ক্রিম ক্রিম ক্রিম হুম হুম হ্রীম হ্রীম স্বাহা।
তারা : দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় রুপ হল মাতারা। এই রুপ হল মা সতীর উগ্র রুপ। শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মে না বৌদ্ধ ধর্মেও এই তারা রুপের আরাধনা প্রচলন রয়েছে। ঋষি বশিষ্ট প্রথম এই তারা রুপের আরাধনা করেন। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার তারা পীঠে এই মা তারারই আরাধনা করা হয়। তারা পীঠের বিখ্যাত তারা সাধক হলেন সাধক বামা ক্ষ্যাপা।
মা তারা মন্ত্র : ওম হ্রীম স্ট্রীম হুম ফট।
ত্রিপুর সুন্দরী : ত্রিপুর সুন্দরী রুপ হল মহাবিদ্যার তৃতীয় রুপ বা বিদ্যা। ত্রিপুর সুন্দরীর আর দুই নাম হল ষোড়শী অথবা ললিতা। এছাড়াও মা ত্রিপুর সুন্দরী রাজরাজেশ্বর নামেও পরিচিত। এই রুপ মাতা পার্বতীর ষোল বর্ষীয় যুবতীর রুপ বলে এই রুপকে ষোড়শী বলা হয়ে থাকে। ত্রিপুরার উদয়পুরের রাধা কিশোর গ্রামে এই ত্রিপুর সুন্দরীর মন্দির রয়েছে।
ত্রিপুর সুন্দরী মন্ত্র : ওঁ আইম হ্রীম শ্রীম ত্রিপুর সুন্দরিয়ায় নমঃ।
ভূবেনশ্বরী : এই মহাবিদ্যার চতুর্থ রুপ হল মাতা ভূবনেশ্বরী। মাতা ভূবনেশ্বরী হল এই পৃথিবীর শক্তির প্রতীক। পুত্র সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে এর পূজা করা হয়। এছাড়া এর পূজা করলে ধন প্রাপ্তি হয়।
ভূবনেশ্বরী মন্ত্র : ওঁ আইম হ্রীম শ্রীম নমঃ।
ভৈরবী : মা ভৈরবী রুপ হল মহাবিদ্যার পঞ্চম রুপ। এর অপর নাম ত্রিপুর ভৈরবী। মাতা ভৈরবীর আরাধনায় সমস্ত বন্ধন মুক্ত হয়। এছাড়াও মাতা ভৈরবীর কৃপা পেলে শিব চেতনা উন্মুক্ত হয়।
ভৈরবী মন্ত্র : ওম হ্রীম ভৈরবী কালৌম হ্রীম স্বাহা।
ছিন্নমস্তা : দশ মহাবিদ্যার ষষ্ঠ রুপ হল ছিন্নমস্তা। দেবী পার্বতীর এই ভয়ংকর রুপের এক হাতে খর্গ আরেক হাতে তার নিজের মস্তক যা তিনি কেটেছেন। তার ছিন্ন কন্ঠ নালী দিয়ে তিনটি রক্ত ধারা রেরোচ্ছে যা পান করছে তার ছিন্ন মস্তক ও তার দুই সহচরী।
ছিন্নমস্তা মন্ত্র : শ্রীম হ্রীম ক্লীম আইম বজরা বৈরোচনিয়াই হুম হুম ফট স্বাহা।
ধূমাবতী : এই মহাবিদ্যার সপ্তম তান্ত্রিক রুপ হল ধূমাবতী। এই রুপ হল মহামায়া দূর্গার প্রতীক। তিনি বৃদ্ধা ও বিধবার বেশে সজ্জিতা। দেবী ধূমাবতী প্রলয়ের প্রতীক। দেবী ধূমাবতী সাধারণত অমঙ্গলকর বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত।
ধূমাবতী মন্ত্র : ওম ধুম ধুম ধুমাবতী দেবায়য় স্বাহা।
বগলামুখী : বগলামুখী রুপটি হল দশ মহাবিদ্যার অষ্টম রুপ। বগলামুখী হল শত্রু নাশের দেবী। মাতা সতীর এই রুপ পীতামবর নামেও পরিচিত। এই রুপের প্রতীক হল মুগুর।
বগলামুখী মন্ত্র : ওম হ্লীম বগলামুখী দেবায়্য হ্লীম ওম নমঃ।
মাতঙ্গী : মাতঙ্গী হল এই মহাবিদ্যার নবম রুপ। মাতঙ্গ হল মহাদের আরেক নাম। যারা মাতা পার্বতীর এই রুপের আরাধনা করেন তারা তাদের অভীষ্ট ফল খুব তাড়াতাড়ি লাভ করে।
মাতঙ্গী মন্ত্র : ওম হ্রীম এম ভগবতী মাতঙ্গেশ্বরী শ্রীম স্বহা।
কমলা : দশ মহাবিদ্যার শেষ রুপ হল মাতা কমলা। পার্বতীর এই রুপ হল লক্ষীর রুপ। সমুদ্র মন্থনের সময় মাতা কমলার সৃষ্টি। কমলা হল শুদ্ধ চৈতন্যের দেবী।
কমলা মন্ত্র : ওম হ্রীম অষ্ট মহালক্ষ্ম্যায় নমঃ।
ভাগ মহাবিদ্যা ও তার মন্ত্র নিয়ে বিশেদে জানতে আমাদের ভিডিও দেখুন :