কেরালার আলাত্তিয়ুর হনুমান মন্দিরের গোপন রহস্য

Sree Alathiyoor Hanuman kavu / Alattiyur Hanuman Temple 


Alathiyoor Hanuman Kavu


সারা ভারত তথা পৃথিবী জুড়ে রয়েছে হনুমান মন্দির। প্রতিটি মন্দিরের একটি আলাদা করে মৌলিকতা রয়েছে। আজকে আমরা এমনি একটি 3000 বছরের পুরোনো মন্দিরের খোঁজ দেব। মন্দিরটি হল কেরালার আলাথিউর হনুমান কাভু বা হনুমান মন্দির। আসুন জেনেনি এই মন্দিরের বিশদ বিবরণ :

আলাথিউর পেরুমথিরিকোভিল হনুমান মন্দিরটি ভারতের কেরালা রাজ্যের মাল্লাপুরম জেলার তিরুরের নিকটে আলাথিউরে অবস্থিত।  মন্দিরটিতে প্রভু শ্রী রাম, ভ্রাতা ভরত এবং ভগবান হনুমানের নিয়মিত পূজা হয়ে থাকে ।  যদিও মন্দিরটির প্রধান আরাধ্য দেবতা হল শ্রীরাম কিন্তু এই মন্দিরটি বিখ্যাত এবং পরিচিত ” হনুমান মন্দির ” বা ” Hanuman Kavu ” হিসেবে। স্থানীয় পৌরাণিক কথা অনুসারে মন্দিরটি অত্যন্ত প্রাচীন এবং এই মন্দিরে যে হনুমান মূর্তি রয়েছে তা আজ থেকে আনুমানিক 3000 বছর আগে হিন্দু পুরাণের সাত মহাঋষির অন্যতম ঋষি, ঋষি বশিষ্ঠ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অনেক আগে, এই মন্দিরটির আলাথিয়ুর গ্রাম নাম্বুদিরির অধীনে ছিল।  এরপরে এটি ভেট্টাথ রাজা অধিগ্রহণ করেন। বর্তমানে মন্দিরটি কোজিককোড়ের জামোরিন রাজা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

Alathiyoor Hanuman Statue



এখানে শ্রী হনুমানের মন্দিরটি এই মন্দিরের মূল দেবতা শ্রী রামের প্রধান মন্দির সংলগ্ন। এখানে শ্রীরামের মূর্তিটি মর্যাদা পুরুষোত্তম রুপে গণ্য হয়েছে। এখানে হনুমান মূর্তিটির আকারের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। শ্রী হনুমান এক হাতে গদা নিয়ে তার বাঁ দিকে কিছুটা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তিনি কীভাবে তাঁর প্রভু রামের কথা শুনেছেন তার প্রতীকী। এই প্রতীকী মূর্তির একটি পৌরাণিক কারণ রয়েছে। সীতা মাতাকে রাবণ অপহরণ করে লঙ্কায় নিয়ে লুকিয়ে রাখে। সীতা মাতাকে উদ্ধারের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় হনুমানকে। কীভাবে লঙ্কায় দেবী সীতার সন্ধান করতে হবে সে সম্পর্কে হনুমানজীকে মূল মন্ত্র অর্থাৎ অভিজ্ঞান বাক্যম প্রদান করেন প্রভু শ্রীরাম। সেই পরামর্শ শোনার ভঙ্গিতেই হনুমানজীর এই মূর্তি। তিনি শ্রী রামকে আশ্বাস দিচ্ছেন এই বলে মনে হচ্ছে যে “আপনার ইচ্ছা আমার আদেশ”। হনুমানকে লঙ্কায় পৌঁছানোর জন্য লঙ্কাকে মূল ভূমি থেকে পৃথক করে এমন বিশাল এবং ভয়ঙ্কর সমুদ্র পার হতে হয়েছিল।  এই মহান বীরের কাজটি দেখার জন্য ত্রিশ কোটি দেবতা জড়ো হয়েছিল।  এটি এমন একটি কাজ ছিল যাতে স্বয়ং ভগবান শ্রী রাম তাঁর ভক্ত হনুমানের সহযোগিতা চেয়েছিলেন।  সমস্ত ঈশ্বর হনুমানকে তাদের বিশাল শক্তি দিয়েছিলেন, যাতে তিনি তাঁর লক্ষ্যে সফল হন। সম্ভবত এই স্থান থেকেই হনুমানজী লঙ্কার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। এখানে লক্ষণের মন্দিরটি মূল মন্দির থেকে কয়েক মিটার দূরে পশ্চিম দিকে অবস্থিত। মনেকরা হয় হনুমানজী ও প্রভু রামের বাক্য বিনিময়ের [অভিজ্ঞান বাক্যম ] গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশ্যেই ভ্রাতা লক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

বছরের পর বছর ধরে এই হনুমান মন্দিরে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তরা আসেন এবং পূজা দেন। এখানে প্রতিদিন নিয়মিত পূজা হয়। আলাথিউরের শ্রী হনুমান তাঁর ভক্তদের সমস্ত মানসিক যন্ত্রণা দূর করেন এবং তাদের অন্তরের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেন। এটি বিশ্বাস করা হয় যে রাতে যাদের দুঃস্বপ্ন আসে তারা এই মন্ত্রটি জপ করলে দুঃস্বপ্ন কেটে যায়। মন্ত্রটি এই রকম :
“ওহে আলঠিয়ুরের হনুমানজী, দয়া করে খারাপ স্বপ্ন আমাদের থেকে দূরে রাখুন এবং যদি আমাদের খারাপ স্বপ্ন আসে তবে দয়া করে আমাদেরকে আপনি আপনার লেজ দিয়ে জাগিয়ে তুলুন।” শ্রী হনুমানের  লঙ্কা গমনের আগে সমুদ্র পার করবার ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য সমুদ্রের এক প্রান্তে একটি দীর্ঘ গ্রানাইট পাথর রয়েছে এবং এটি সেই হনুমানজীর সমুদ্র পার করবার প্রতীক বলে গন্য হয়।  ভক্তরা ছুটে এসে লম্বা পাথরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটি বিশেষত বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর জীবন প্রাপ্ত হয়। মন্দিরটিতে হনুমানজীর প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় হল “পটি অ্যাভিল” এবং অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসাদ হল “কাদালি”।

মন্দির পরিচালনার শৃঙ্খলা এবং ভক্তদের ক্রমবর্ধমান সমর্থন প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই মন্দিরটিকে আধ্যাত্মিক পুনর্জীবনের এক প্রাণবন্ত কেন্দ্র হিসাবে পরিণত করেছে।  সর্বস্তরের ও সকল পটভূমির এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জনগণ শ্রী হনুমানের আশীর্বাদ কামনা করে হনুমান মন্দিরে ভিড় করে।


মন্দিরের সময় সূচী :

সোমবার থেকে রবিবার :
সকাল : 5.00 am থেকে 10.00 am
বিকেল : 5:00 pm থেকে 08.00 pm

কিভাবে পৌছাবেন : 

নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন: তিরুর রেলওয়ে স্টেশন।[ দূরত্ব : 12 কিলোমিটার ]
নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট : কাজিগুদ।

ঠিকানা:
হনুমান কাভু-মুসিলিয়ারাঙ্গাদি রোড, পাইলিসেরি, তিরুর, মালাপুপুরম, কোলোলম্বা, কেরল 676102, ভারত

Official Website : www.alathiyoorhanumankavu.in

আরও পড়ুন : 





Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *