হিন্দু শাস্ত্রে সকল ব্রতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল মহা শিব রাত্রির ব্রত। ভক্তদের মহাশিব রাত্রির ব্রত পালনের নিয়ম ও মন্ত্র জানা অত্যন্ত জরুরী। মহা শিবরাত্রি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। অজ্ঞতা ও অন্ধকার দূর করে ভক্তদের আলোর পথে নিয়ে আসে এই মহাশিব রাত্রি। শিব পুরাণ অনুসারে ভগবান শিব এই মহা শিব রাত্রির দিনই মহা তান্ডব নৃত্য করেছিলেন। এই শিব রাত্রির দিনই শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। আবার এই দিনই শিব লিঙ্গ রুপে প্রকাশ পায়। শিব রাত্রির ব্রতের দিন ভক্তরা উপবাস করে সূর্যাস্তের পর চার প্রহর শিব লিঙ্গে দুধ, দই, ঘৃত, মধু ও গঙ্গাজল ইত্যাদি অর্পন করে বেলপাতা, নীলকন্ঠ, ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা প্রভৃতি ফুল দিয়ে পূজো করে “ওঁ নমঃ শিবায়” মহামন্ত্র জপ করে ব্রত পালন করে। আসুন বিস্তারিত ভাবে দেখেনি মহা শিব রাত্রির ব্রত পালন কিভাবে করতে হয়।
মহা শিব রাত্রির ব্রত পালনের নিয়ম // মহাশিব রাত্রি পুজো পদ্ধতি:
বিভিন্ন পুরানমতে শিব রাত্রির ব্রত পালনের নিয়মগুলো হলঃ
এক : ব্রত পালনের আগের দিন একবেলা আহারের বিধান রয়েছে শাস্ত্রে। তবে খেয়াল রাখবেন আপনার খাবারের তালিকায় যেন অপাচ্য খাবার না থাকে।
দুই : শিব রাত্রির দিন সকালে উঠেই স্নান সেরে নেবেন। স্নানের সময় স্নানের জলে অবশ্যই কালো তিল কিছুটা পরিমান দিয়ে স্নান করবেন। যদি গঙ্গা স্নান করা যায় তাহলে খুব ভাল হয়।
তিন : স্নান করার পরে ভক্তদের সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পূর্ণ দিনের উপবাস পালনের জন্য এবং পরের দিন উপবাস ভঙ্গ করার জন্য সংকল্প গ্রহণ করবেন । সংকল্পের সময় ভক্তরা উপবাসের পুরো সময় জুড়ে আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অঙ্গীকার করবেন এবং মহাদেবের কাছে আশির্বাদ চাইবেন।
চার : যারা এই দিন ব্রত রাখছেন তারা উপবাসের সময় সব ধরনের খাবার থেকে বিরত থাকবেন। এমনকি এই সময় জলও খাওয়া উচিৎ নয়। যদিও যারা এই কঠোর নিয়ম উপবাসের নিয়ম পালনে অপারক তারা দিনের বেলা সূর্যস্তের আগে ফল ও দুধ খেতে পারেন। কিন্তু সূর্যাস্তের পর পূর্ণ রুপে উপবাস আপনাকে করতে হবে।
পাঁচ : সন্ধ্যায় ভক্তকে আবার স্নান সেরে নেওয়া উচিত।
ছয় : আপনি যদি কোন মন্দিরে গিয়ে জল প্রদান করেন তাহলে খুব ভাল হয় তবে মন্দিরে যাওয়া যদি সম্ভব না হয় তাহলে বাড়িতেই কোন শিব লিঙ্গ প্রতিষ্টা করে আপনি শিব রাত্রির ব্রত পালন করতে পারেন।
সাত : অবশ্যই সূর্যাস্ত গেলে রাতে শিবপূজা করতে হবে। শিবরাত্রির পূজা রাতে চারবার করতে হয়। তবে চারবার যারা করবেন না তারা একবারও করতে পারেন। চারবার শিব পূজা করার জন্য চারটি প্রহরে করতে হয়। যে সমস্ত ভক্তরা এক প্রহরে পূজা করতে চান তাদের মধ্যরাতে পুজো করা উচিত।
2023 সালের শিব রাত্রির সময় দেখতে এখানে click করুন।
আট : চারটি প্রহরে বিভিন্ন প্রকার বিশেষ উপকরণ দিয়ে শিব লিঙ্গের অভিষেক করতে হবে। সাধারণত দুধ, গোলাপ জল, চন্দন, দই, মধু, ঘি, চিনি এবং জল অভিষেকের জন্য ব্যবহৃত হয়। যে সমস্ত ভক্তরা চারটি প্রহর পূজা করবেন, তাদেরকে অন্যান্য উপকরণ ছাড়াও প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে অভিষেক করবেন,দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে অভিষেক করবেন, তৃতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে এবং চতুর্থ প্রহরে মধু দ্বারা অভিষেক করতে হবে। অভিষেকের পর শিব লিঙ্গে বেল পাতা অর্পণ করতে হবে। শিবের পূজার বেলপাতার প্রতিটি যৌগিক পত্রের নিচে বৃন্ত বা বোঁটার কাছের একটু মোটা অংশ অবশ্যই ভেঙ্গে বাদ দিয়ে তবে সেই বেলপাতা অর্পণ করা উচিত এবং বেলপাতার মসৃণ অংশ শিব লিঙ্গে অর্পন করবেন।
নয় : এরপরে শিব লিঙ্গে চন্দন বা কুমকুম প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রদীপ এবং ধূপ জ্বালাতে হয়। এরপরে শিব লিঙ্গে বিভূতি অর্থাৎ ভস্ম অর্পণ করতে হবে।
দশ : ভক্তদের পরের দিন স্নান করে শিব রাত্রির উপবাস ভাঙতে হবে। ভক্তদের সূর্যোদয়ের মধ্যে এবং চতুর্দশী তিথি শেষ হওয়ার আগে উপবাস ভঙ্গ করা উচিত।
মহা শিব রাত্রির চার প্রহরের পুজোর মন্ত্র ও নিয়ম :
প্রথম প্রহরের পুজোর মন্ত্র : প্রথম প্রহরে দুধ দিয়ে স্নান করাতে হয়।
মন্ত্র- ইদং স্নানীয়দুগ্ধং ওঁ হৌঁ ঈশানায় নমঃ।
দ্বিতীয় প্রহরের পুজোর মন্ত্র : দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে স্নান করানোর নিয়ম।
মন্ত্র- ইদং স্নানীয়ং দধি ওঁ হৌঁ অঘোরায় নমঃ।
তৃতীয় প্রহরের পুজোর মন্ত্র : তৃতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে স্নান করাতে হয়।
মন্ত্র- ইদং স্নানীয়ং ঘৃতং ওঁ হৌঁ বামদেবায় নমঃ।
চতুর্থ প্রহরের পুজোর মন্ত্র : চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে শিবকে স্নান করাতে হয়।
মন্ত্র- ইদং স্নানীয়ং মধু হৌঁ সদ্যোজাতায় নমঃ।
শিব রাত্রির পুজোর মূল মন্ত্র : ওঁ নমঃ শিবায়।
ওঁ নমঃ শিবায় মন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এইখানে Click করুন।
মহাশিব রাত্রির ব্রত পালনের নিয়ম ও মন্ত্র জানবার সময় আপনাদের একটি বিষয় অবশ্যই জানা প্রয়োজন তা হল মহাদেবকে প্রসন্ন করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন ভক্তি। ভোলেনাথ খুব অল্পতেই তুষ্ট হন। তাই পূর্ণ ভক্তি ও বিশ্বাস রেখে তারপরই এই শিব রাত্রির ব্রত পালন করতে হয়।