মহিলারা কি হনুমান পূজা করতে পারে অথবা Hanuman Chalisa পাঠ করতে পারে?
অনেকের মনেই এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে যে মহিলারা কি সত্যিই হনুমানজীর পূজা করতে পারে না অথবা হনুমান চালিসা কি শুধু পুরুষদের জন্য? মহিলারা কি হনুমান চালিসা পাঠ করতে পারবেন না? তাহলে কি হনুমানজীর কৃপা কি শুধু পুরুষদের প্রাপ্য? মহিলারা কি তাহলে এ থেকে বঞ্ছিত? আসুন আমরা এই কথা গুলি যুক্তি দিয়ে বিচার করে তবেই এক সিধান্তে আসি।
আলোচনার প্রথমেই বলে রাখি হ্যাঁ মহিলারাও হনুমানজীর পূজা করতে পারেন এবং সমান ভাবে হনুমান চালিসাও পরতে পারেন। এতে কোথাও কোন বাধা নেই। তুলসি দাস রচিত হনুমান চালিসার আটত্রিশ ও উনচল্লিশতম চৌপাই- য়ে বলা রয়েছে যথাক্রমে এই রকম যে : যো শত বার পাঠ করে কয়ৈ। ছুটহি বন্দি মহা সুখ হোয়ি।। এবং যো যহ পড়ে হনুমান চালিসা হয় সিদ্ধি সখি গৌরিসা।। এই দুটি চৌপাইয়ের অর্থ যথাক্রমে এই রুপ – যে এই হনুমান চালিসা শত বার পাঠ করবে তার বন্ধন মুক্ত হয়ে মহাসুখ লাভ করবে। এবং উনচল্লিশতম চৌপাইয়ের অর্থ হল যে কেও এই হনুমান চালিশা পাঠ করলে সিদ্ধি লাভ করবে। এখানে তুলসিদাসজী কোন পুরুষ বা মহিলা সেই রকম কিছু উল্লেখ করেন নি যে পুরুষেরই শুধুমাত্র সিদ্ধি লাভ হবে বা মহাসুখ প্রাপ্ত হবে। সুতরাং এখানে উনি ‘যে কেও’ উল্লেখ করেছেন। উনি নারী পুরুষ কিছুই ভেদাভেদ করেন নি। যেখানে হনুমান চালিসার লেখক তুলসি দাসজীর মত একজন মহাজ্ঞানী নরীদের বঞ্ছিত করেন নি সেখানে নরীদের হনুমান চালিসা পাঠে আর কোন বাধাই থাকতে পারে না। তাই নারীরাও হনুমান চালিসা পরতে পারে এবং হনুমানজীর কৃপা লাভ করতে পারে।
এবার আসি হনুমানজীর পূজার কথায়। আমাদের শাস্ত্রে কোথাও হনুমানজীর পূজা মহিলারা করতে পারবেন না এমন কিছুই বলা নেই। বরং তারাও পুরুষদের মত হনুমানজীর পূজা করতে পারে, মন্দিরে যেতে পারে। একথা মনে রাখবেন হনুমানজীর পূজা যেমন সরল আবার তেমনি কঠোর নিয়মে বাধা। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষদের অধিকাংশ সময় বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।তাই তাদের অনেকেরই পূজার সব বিধান পালন করা সম্ভব হয় না। এই ক্ষেত্রে বাড়ির মহিলারাই তাদের ভাই বা স্বামীর কাছ থেকে তাদের সংকল্প নিয়ে তাদের হয়ে হনুমানজীর পূজা করে থাকেন। তবে একথা সত্য যে মহিলাদের হনুমানজীর আরাধনায় কিছু কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে। এই বিধি নিষেধ গুলি কি কি আর কেন এই বা বারণ রয়েছে তা জানলে আপনি বুঝতে পারবেন কোন ভাবেই আমাদের সনাতন শাস্ত্র মহিলাদের অসম্মান করেন নি বরং তাদের সম্মানহেতু এই সব বিধি রয়েছে। আসুন দেখেনি কি কি সেই বাধা নিষেধ আর কেন এবং সেই অবস্থায় মহিলাদের কি করনীয়।
হনুমানজীকে মহিলারা সিঁন্দুর চড়াতে পারবেন না :
হ্যাঁ। হনুমানজীকে মহিলারা পূজার সময় সিঁন্দুর চড়াবেন না। এর কারন হল আপনার সিঁথির সিঁন্দুরটি আপনার স্বামীর দান। তাই আপনার স্বামীর মঙ্গলের জন্যই আপনার সিঁন্দুর দিতে বারণ রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি হনুমানজীকে সিঁন্দুর আপনার স্বামী বা আপনার ভাই যে পুরুষ মানুষই আপনার সঙ্গে মন্দিরে যাক না কেন তিনি আপনার হয়ে হনুমানজীকে সিন্দুর চড়াবেন। আপনার সঙ্গে যদি কেও না যায় তবে মন্দিরের পুরোহিত মহাশয়কে বলুন আপনার হয়ে সিন্দুর চড়িয়ে দিতে।
হনুমানজীর পূজায় মহিলারা হনুমানজীর মূর্তি স্পর্শ করতে পারেন না :
পূজা করবার সময় মহিলাদের প্রান প্রতিষ্টিত মূর্তি বা ছবিতে স্পর্শ করা যায় না। এর কারন হিসেবে বলা যায় হনুমানজী হলেন বাল ব্রহ্মচারী। তাই ওনার মূর্তি বা ছবিতে মহিলারা স্পর্শ করতে পারেন না। এক্ষেত্রেও মহিলারা মন্দিরের পুরোহিত মশাইয়ের সাহায্য নিন।
ঋতু স্রাবের সময় মহিলাদের হনুমানজীর পূজা থেকে বিরত থাকা উচিত :
হনুমানজী কেন যে কোন দেব দেবীর পূজায় পুরুষ ও মহিলা যেই হোক না কেন আপনার শরীর মন শুদ্ধ থাকা অবশ্যই জরুরি। তাই শরীরের পরিচ্ছন্নতা হেতু হনুমানজীর পূজা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। এই একই নিয়ম পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কোন পুরুষই অপরিচ্ছন্ন শরীর ও মনে হনুমানজীর পূজা করতে একদমই পারেন না। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আপনার পরিস্কার হবে। আপনার বাড়ির কেও বা বাড়িতে কোন আত্মীয় এসেছেন। সেক্ষেত্রে আপনি কখনই তাকে ময়লা জামা কাপড়ে বা অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় কোনকিছু পরিবেশন করবেন না। তাহলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যদি আপনি এই জিনিসটি না করতে পারেন তাহলে হনুমানজীর মত একজন ভগবানের জন্যও নিশ্চয়ই কাম্য নয়। ঠিক এই কারনেই মহিলাদের দীর্ঘ সময়ের কোন সংকল্প নেওয়া বারন। যেমন টানা 108 দিন হনুমান চালিসা পাঠ।
হনুমানজীর সামনে মহিলারা দন্ডায়মান হয়ে প্রনাম করা বারণ :
হনুমানজীর পূজায় মহিলারা দন্ডায়মান হয়ে প্রনাম করা বারণ। কারণ হনুমানজী মহলাদের সীতা মা মনে করেন। তিনি স্বয়ং মহিলাদের সামনে মাথা নত করেন।
হনুমানজীকে পঞ্চমৃত স্নান করান বা বস্ত্র অর্পণ উচিত নয় :
এর কারণ হিসেবেও বলা যায় হনুমানজী বাল ব্রহ্মাচারী তাই আপনি যদি ওনাকে স্নান বা বস্ত্র অর্পণ করতে যান তাহলে ওনার প্রান প্রতিষ্ঠিত মূর্তিটিতে আপনার স্পর্শ লাগবে। তাই এই পূজা বিধি গুলি মহিলাদের জন্য বারণ করা রয়েছে। এক্ষেত্রেও আপনি আপনার বাড়ির কেও বা মন্দিরের পুরোহিতজীর মাধ্যমে বস্ত্র অর্পণ করতে পারেন।
এছাড়াও যে সমস্ত কাজ মহিলাদের হনুমানজীর পূজায় করা উচিত নয় :
- মহিলাদের হনুমানজীকে চরন পাদুকা অর্পন করা উচিত নয়।
- মনিলাদের বজরং বান পাঠ করা উচিত নয়।
- মহিলাদের বজরংবলীকে আসন দান করা যায় না।
- মহিলাদের হনুমানজীর প্রান প্রতিষ্ঠিত মূর্তিতে স্পর্শ করা উচিত নয়।
পরিশেষে বলা যেতে পারে কোন ভাবেই মহিলারা হনুমানজীর কৃপা থেকে বঞ্চিত নন। শুধুমাত্র কিছু কিছু পূজা বিধি থেকে মহিলাদের দূরে থাকতে বলা হয়েছে। তার কারণ এই নয় যে হনুমানজী শুধু পুরুষের দেবতা। উনি সমস্ত মহিলাদের মধ্যে সীতা মাতাকে দেখেন। তাই মহিলাদের প্রতি তার আলাদাই সম্মান। মহিলারা নিয়মত হনুমান চালিশা পাঠ করবেন এবং নিদিষ্ট বিধান মেনে হনুমানজীর পূজাও করবেন। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে সনাতন হিন্দু ধর্মে কোথাও মহিলাদের প্রতি বঞ্চনার কথা বলা হয় নি। ঋক বৈদিক যুগে ঘোষা, অপলা, মৈত্রী র মত মহিয়ষি মহিলাদের কথা আমরা ইতিহাসে পড়েছি। তারা পুরুষদের সমতুল্য সম্মান তাদের সমাজে ছিল। পরবর্তীকালে কালে যে সমস্ত হিন্দু ধর্মে মহিলাদের প্রতি সতীদাহ বা সেই রকম ভয়ংকর বিধান গুলি ছিল সেগুলোর সঙ্গে মূল শাস্ত্রের কোন সম্পর্ক নেই। যত সময় পেরিয়েছে আমাদের কিছু স্বর্থান্বেষী ধর্মের ঠিকাদার এই সব শাস্ত্র বহির্ভূত কিছু জিনিস আমাদের ধর্মে অন্তর্ভুক্ত করে। তাই কালের নিয়মে বিভিন্ন মনীষীরা এসে হিন্দু ধর্ম থেকে সেই সমস্ত ক্রুড় বিষয় গুলি উৎখাত করেছে। তাছাড়াও ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ষ্ঠা হলে মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। সনাতন হিন্দু ধর্মে মহিলাদের প্রতি যে সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে তা আর কোন ধর্মে নেই।