পবন পুত্র হনুমানের দশটি অজানা গল্প

Ten Untold Story about Hanuman / Ten Unknown Story  of Hanuman / 10 Interesting facts about Lord Hanuman
Unknown fact about lord hanuman, unknown story of lord hanuman


পবন পুত্র হনুমানের অসীম ক্ষমতার কথা আমাদের সকলেরই জানা রয়েছে। তাকে প্রসন্ন করবার জন্য আমরা সকলেই হনুমান চালিশা পাঠ করে থাকি। কিন্তু তার জীবনের অনেক কথাই আমাদের আজানা। আজ আমরা জানব হনুমানজীর জীবনের দশটি আজানা গল্প যেগুলো আপনি আগে কখনও শোনেননি এ ব্যাপারে নিশ্চিত।

এক।। হনুমানজীর জন্ম হয়েছিল মাতা অঞ্জনীর পাপ নির্মূল করতে :

হনুমানজীর মা অঞ্জনী ছিলেন মর্তের এক অপ্সরা। মুণি ঋষির পাপে তার মুখ বাঁদরের মত বিকৃত হয়ে যায়। তাকে অভিশাপ দেওয়া হয় তিনি যখনই ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবেন তার মুখ বানরাকৃতি হয়ে যাবে। অঞ্জনী প্রেম বন্ধন এবং বিবাহ হয় বানর রাজ কেশরীর সঙ্গে। অঞ্জনী ছিলেন শিবের উপাসক। তার উপাসনায় শিব প্রসন্ন হয়ে তাকে বর দেয় যে তার গর্ভে জন্ম নেবেন  এবং তাতে তার পাপ কেটে যাবে। একবার রাজা দশরত পুত্র লাভের আশায় যজ্ঞ করছিলেন। সেই যজ্ঞের প্রসাদ যেটা কৌশল্যার পাতে পড়ার কথা ছিল সেটি একটি চিল এসে আচমকাই নিয়ে উড়ে চলে যায় এবং অঞ্জনীর পাতে পড়ে। অঞ্জনী সেটি শিব ঠাকুরের প্রসাদ ভেবে খেয়ে নেয় এবং গর্ভবতী হয়। পরে শিব ঠাকুরের একাদশ তম রুদ্র অবতার হনুমানের জন্ম হয় এবং মাতা অঞ্জনী পাপ মুক্ত হন।

দুই।। শ্রীরামের দ্বারা হনুমানকে মৃত্যু দন্ড প্রদান :

কি শিরোনাম পরে অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ এমনটাই একবার হয়েছিল। যেই প্রভু রামের হনুমান ভক্ত ছিল সেই রামই একবার হনুমানকে বধের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। একবার কোন এক কারনে রাম চন্দ্রের গুরু বিশ্বামিত্র হনুমানের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং তিনি শিষ্য রামকে হনুমান বধের আদেশ দেন। রাম গুরুর আদেশ পালন করবার জন্য হনুমানজীর ওপর অনেক মায়াবী বাণ বর্ষন করেন। কিন্তু হনুমান সেই বাণের বিপরীতে ধ্যগমগ্ন হয়ে রাম নাম করতে থাকেন নিরন্তর। রাম নামের প্রভাবে শ্রী রঘুবীরের একটিও বাণ হনুমানের গায়ে লাগে নি। রাম নামের জন্য হনুমান একেবারে অক্ষত থাকেন।

তিন।। মাতা সীতার উপহার হনুমানের প্রত্যাখ্যান :

সীতা মাতা একবার প্রসন্ন হয়ে খুব সুন্দর এক সোনার হার উপহার দেন হনুমানকে। কিন্তু হনুমান সেই উপহার নিতে অস্বীকার করেন। সীতা মাতা একটু অসন্তুষ্ট হয়ে তার উপহার প্রত্যাখ্যান করার কারন জিজ্ঞেস করেন। তখন হনুমান তার বুক চীরে সীতা মাতাকে দেখান তার বুকে শ্রীরাম ও সীতা বাস করেন তাই অন্য সব কিছু তার কাছে তুচ্ছ।

চার।। হনুমানের লেখা রামায়ন : 

হনুমানজীও একবার রামায়ন লিখতে গেছিলেন। বরং বলা ভাল রামায়ন লিখেছিলেন। লঙ্কা কান্ডের পর হনুমানজী একবার হিমালয়ে গিয়ে নখ দিয়ে রামায়ন রচনা করতে লাগলেন। কিন্তু এদিকে ঋষি বাল্মিকী এই কথা শুনে একটু অভিমান করেন। বাল্মিকীর অভিমানের কথা শুনে হনুমানজী তার লেখা রামায়নসহ পর্বতটি সাগরে ফেলে দেন।

পাঁচ।। ভীম এবং হনুমান দুই ভাই : 

আপনারা সকলেই জানেন মহাভারতে উল্লেখ আছে একবার হনুমানজী ভীমের গর্ব চূর্ন করেছিলেন। কিন্তু আপনারা জানেন কি ভীম ও হনুমান দুই ভাই। হনুমানজীর জন্মদাতা পিতা হলেন কেশরী আর ভীমের হলেন পান্ডুর ছেলে। কিন্তু এদের দুজনেরই আধ্যাত্মিক পিতা হলেন বায়ু।  তাই তারা একে অপরের সহদর। হনুমানজীর জন্মে বায়ুর অবদানতো আপনি জানেন। ঠিক সেই রকমই ভীমের জন্মের পেছনেও বায়ুর অবদান রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পঞ্চপান্ডবের পিতা যুধিষ্ঠির কিন্তু এক অভিশাপে সন্তান জন্মে অপারক ছিলেন।

ছয়।। হনুমান নামের প্রকৃত অর্থ বিকৃত চোয়াল :

হনুমান কথাটি প্রকৃতপক্ষে একটি সংস্কৃত শব্দ। ‘হনু’ কথাটির অর্থ হল ‘ চোয়াল ‘ এবং ‘মান’ কথাটির অর্থ হল ‘বিকৃত’। অর্থাৎ বিকৃত চোয়াল। শৈশবে সূর্যকে মধুর ফল ভেবে খেতে যাওয়ায় ইন্দ্র দেবের বজ্র প্রহারে হনুমানজীর চোয়াল বিকৃত আকার ধারন করে। 

সাত।। হনুমানের ক্ষুধা নিবারণ :

বনবাসের সময় একবার হনুমানজী সীতা মাতার সঙ্গে দেখা করতে তাদের কুটিরে যান। সীতা মাতা খুব আনন্দিত হয়ে হনুমানজীকে খেতে বললেন এবং তার জন্য অনেক খাবার রান্না করলেন। এবার খাবার সময় সীতা মাতা যখন খাবার পরিবেশন করতে লাগলেন তখন হনুমানজীর ক্ষুধা কোন ভাবেই মিটছিল না। এর মধ্যে সীতা মাতার রান্না করা খাবার প্রায় শেষের পথে। এই অবস্থায় সীতা মাতার রামজীর স্মরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না। তিনি রামজীকে সব কথা বললেন এবং রামজী হনুমানজীর খাবারে তুলসীপাতা খেতে দেবার জন্য বললেন। সীতা মাতা রামজীর কথা মত তাই করলেন। তুলসীপাতা খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হনুমানজীর ক্ষুধা নিবারণ হয়ে গেল। 

আট।। কিভাবে সুগ্রীবের সেনাপতি হলেন হনুমানজী :

শৈশবে যে সূর্যদেবকে হনুমানজী মধুর ফল ভেবে খেতে গেছিলেন বড় হয়ে সেই সূর্যদেবকেই তার গুরু করে ছিলেন। সূর্যদেব হনুমানজীর মেধায় অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি মাত্র ষাট ঘন্টায় সমস্ত শাস্ত্র জ্ঞান লাভ করে ছিল। সূর্যদেব হনুমানজীর কাছ থেকে গুরু দক্ষিণা হিসেবে সুগ্রীবের সঙ্গী হতে বলেন। তিনি সুগ্রীবের সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। সুগ্রীব ছিলেন সূর্য দেবেরই সন্তান।

নয়।। ভরত দ্বারা হনুমানজীকে আক্রমণ :

হনুমানজী একবার ভরত দ্বারা তীরবিদ্ধ হয়েছিলেন। রাম রাবণের যুদ্ধে লক্ষণের একবার প্রান ত্যাগ ঘটেছিল সেই কথা সকলেরই জানা। হনুমানজীর দায়িত্ব পড়েছিল সঞ্জীবনী বুটি আনবার। সেই আদেশানুসারে হনুমানজী সঠিক সঞ্জীবনী বূটি চিনতে না পেরে গোটা গন্ধমাদন পর্বত তুলে নিয়ে আসবার সময় ভরত মনে করেন কোন দৈত্য অযোধ্যার ক্ষতি করতে এসেছে। তিনি শ্রীরামের নামে এক তীর ছোঁড়েন। সেই তীর হনুমানজীর পায়ে গিয়ে লাগে। তীর শ্রীরামের নামে ছোড়া হয়েছিল বলে হনুমানজী সেই তীর প্রতিরোধ করে নি। পরে ভরত আহত হনুমানজীর কাছ থেকে সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি হনুমানজীকে সাহায্য করবার কথা বললেও হনুমানজী তা নিতে অস্বীকার করেন।

দশ।। হনুমানজীরা মোট ছয় ভাই ছিলেন : 

ব্রহ্মপুরাণ অনুসারে মাতা অঞ্জনী ও কেশরীর হনুমানজী ছাড়াও আরও পাঁচ সন্তান ছিল। অর্থাৎ হনুমানজীর আরও পাঁচ ভাই ছিল। তাদের নাম : মাতিমান, শ্রুতিমান, কেতুমান, গাতিমান ও ধৃতিমান। হনুমানজী ছিলেন বাণররাজ কেশরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। 

উপরের এই দশটি ঘটনার বেশিরভাগ গুলোই হয়ত আপনাদের অজানা ছিল। হনুমানজীর অপার ক্ষমতার মত তার জীবনের অনেক ঘটনাই আমাদের কাছে আজও অজানা এক রহস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *