ভগবান হনুমান কি এখনও বেঁচে আছেন?

Is Lord Hanumana still alive? /  Lord Hanuman Still Alive Proof 



চারো যুগ পরিতাপ তুম্হারা। হৈ পরসিদ্ধ জগত উজিয়ারা।। তুলসীদাস রচিত হনুমান চালিশার এই চৌপাঈটি না জানি আমরা কতবার পড়েছি। এই চৌপাঈের অর্থ হল চার যুগ ধরে তোমার অর্থাৎ হনুমানজীর প্রতাপ বর্তমান থাকবে। অর্থাৎ হনুমানজী এই কলী যুগেও বর্তমান আছেন। কিন্তু আপনাদের মনে একটি প্রশ্ন আসে যে ভগবান হনুমান কি সত্যিই আজও বেঁচে রয়েছেন? এটাও অনেকে প্রশ্ন করেন আদৌ কি রামায়নে বর্নিত চরিত্র গুলো বাস্তবে ছিল না সেগুলো কাল্পনিক? আজকে আমি কতকগুলি বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরব সেগুলো পড়ে সিদ্ধান্ত আপনি নেবেন।

এক।। দোলুকান্ড সঞ্জীবনী পর্বতমালা, শ্রীলঙ্কা : 

Is hanuman still alive, hanuman alive, immortal hanuman


রাম – রাবণের যুদ্ধে একবার রামজী সমেত গোটা বানর সেনা প্রচণ্ডভাবে আহত হয় এবং লক্ষণ প্রান হারান। হনুমানজীর ওপর দায়িত্ব পড়ে হিমালয় থেকে সঞ্জীবুনী বুটি আনবার। হনুমানজী সঞ্জীবুনী বুটি সঠিক ভাবে না চিনতে পেরে গোটা গন্ধমাদন পর্বত তুলে নিয়ে আসেন। গোটা পর্বত তুলে আনবার সময় সেই পর্বতের কিছু অংশ পাঁচটি জায়গায় পড়ে। এই পযর্ন্ত হয়ত সবার জানা।

আপনারা সবাই জানেন রাম – রাবণের যুদ্ধ স্থল শ্রীলঙ্কা। পর্বতের টুকরো যে জায়গায় পড়েছিল সেই পাঁচটি জায়গা বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত। এই পাঁচটি পর্বতকে একসঙ্গে ‘Sanjeevani Drop’ বলা হয়।

ঠিক সেই রকমের এক পর্বতের সন্ধানদি আপনাদের। শ্রীলঙ্কার কুরুনেগালা জেলার হিরিপিতিয়া গ্রামে অবস্থান করছে দোলুকান্ড পর্বত। এই পর্বতের কিছু আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই পর্বতের উদ্ভিদ গুলোর বৈশিষ্ট্য ভারতের হিমালয় পর্বতমালার সঙ্গে মেলে। এই পর্বত ভেষজ গাছে পরিপূর্ণ যা যেকোন জটিল রোগ নিরাময়ে অব্যার্থ বলে বিশ্বাস করা হয় । হিমালয় থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে হিমালয়ের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন পর্বত পাওয়া সত্যিই আশ্চর্যের।

আরও চারটি শ্রীলঙ্কার পর্বত যেখানে গন্ধমাদন পর্বতের অংশ পড়েছিল  :

  1. উওর শ্রীলঙ্কার জাফনায় কাছছাতিভু দ্বীপ।
  2. মান্নারের কাছে থাল্লাডি।
  3. অনুরাধাপুরা এবং পোল্লোন্নারুয়ার মধ্যে রিতিগালা।
  4. উনাওয়াতুনা রুমাসসালা।
আজ থেকে সহস্র শতাব্দী বছর আগে লেখা রামায়ন। কারও পক্ষে অযোধ্যায় বসে থেকে শ্রীলঙ্কার ভৌগলিক চিত্র পাওয়া সম্ভব ছিল না। রামায়ন যদি কাল্পনিক কোন গল্প হয় তাহলে কি করে এক জন অযোধ্যায় বসে সহস্র মাইল দূরে শ্রীলঙ্কার ভৌগলিক চিত্র নির্ভূল ভাবে তার লেখায় বর্ণনা করতে পারেন? একটু ভেবে দেখবেন? 

[ আরও পড়ুন : পবন পুত্র হনুমানের দশটি অজানা গল্প ]

দুই।।হনুমানজীর বিশালাকার পদ চিহ্ন :

Hanuman Foot Print


ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের লেপাকী সহ মালেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন বিশালাকার পদচিহ্নের হদিশ পাওয়া গেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদের মত অনুযায়ী এই পদচিহ্ন গুলি  কয়েক লাখ বছর পুরোনো যা রামায়নের সময়কালকে নির্দেশ করে। এই পদচিহ্ন গুলো আকারে এতটাই বড় যে এগুলো মানুষের পদচিহ্নর মত দেখতে মনে হলেও এর বিশালাকৃতি দেখে মনে হয় এটি কোন সাধারণ মানুষের পদচিহ্ন নয়। অনুমান করা হয় এটি হনুমানজীর পদচিহ্ন। এর ওপর আরও একটি প্রশ্ন আসে। পদচিহ্ন গুলির আকৃতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। এর উওরে বলা যায় হনুমানজীর অনীমা ও গরিমা সিদ্ধির প্রয়োগে বিভিন্ন সময় তার দেহের আকৃতি বড় বা ছোট করবার ঘটনা রামায়নে বর্ণিত রয়েছে। তাই তার পদচিহ্ন বিভিন্ন জায়গার আকৃতি বিভিন্ন রকমের।

এই পায়ের ছাপ গুলো কোন বিশালাকার মানুষের এ ব্যাপারে কারও কোন সন্দেহ নেই। আর ভারত এবং শ্রীলঙ্কায় যে সমস্ত পায়ের ছাপ গুলি বর্তমান সেগুলো সব গুলোই রামায়নের কোন না কোন অংশের বর্ণিত গল্পের যে স্থান তার খুব কাছে অবস্থান করছে। এই সব প্রমান দেখে কি ভাবছেন? গোটাটাই কাকতলীয়? নাকি রামায়ন শুধুমাত্র কাল্পনিক একটি গল্প আর হনুমানজীর অমরত্ব প্রাপ্তিও একটি মন ভোলান গল্প। কি বলবেন হনুমানজী কি আজও আমাদের মধ্যে রয়েছেন? সিদ্ধান্ত আপনার?

[ আরও পড়ুন : তুলসীদাস ও হনুমান চালিশার হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস। ]


তিন।। প্রতি 41 বছর পর পর হনুমানজী এখানে ফিরে আসেন : 

Is lord hanuman still alive, Hanuman immortal
Add caption
Lisecnce : Creative common.

রামচন্দ্র স্বর্গলোক ফিরে যাবার পর হনুমানজী মনের কষ্টে অযোধ্যা থেকে দক্ষিণ ভারতে চলে আসেন। সেই সময় তিনি শ্রীলঙ্কার “মাথাঙ্গ” নামক উপজাতির কাছে তিনি কিছুদিন ছিলেন। এই উপজাতির লোকেরা বিভীষণের বশংধর বলে মনা করা হয়। এই উপজাতির লোকেরা হনুমানজীকে অনেক শুশ্রূষা করেন। তাদের সেবায় মুগ্ধ হয়ে হনুমানজী সেই উপজাতির লোকেদের ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। হনুমানজী কথা দেন তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ব্রহ্মজ্ঞান দিতে প্রতি 41 বছর পরপর ফিরে আসবেন।

ঠিক সেই আদিবাসীদেরই একটি সমীক্ষা করে শ্রীলঙ্কার SETUU নামে এক ধার্মিক সংগঠন। তারা সেখান থেকে একটি লিখিত আকারে একটি ‘লগবই’ উদ্ধার করেন। সেখানে হনুমানজীর সঙ্গে সেই উপজাতির লোকেদের কথোপকথন ও হনুমান লীলা লিপিবদ্ধ আছে। ঐ সংস্থা সেই কথোপকথন অনুবাদ করার চেষ্টা করছে। 

হনুমানজী সেই উপজাতিদের মধ্যে শেষ এসেছিলেন 2014 সালে। সেখানেই ” চরন পূজা” এবং ‘সাক্ষাত হনুমান পূজা’ অনুষ্ঠিত হয়। আর যে স্থানে এই দুটি অনুষ্ঠান সংগঠিত হয় সেই স্থানকে বলা হয় ‘ হনু মন্ডল’। হনুমানজী যখন তাদের মধ্যে ছিলেন তখন এক ব্যক্তি একটি ছবিও তোলেন। কিন্তু ছবিটি খুবই অস্পষ্ট। ঐ স্থানে হনুমানজী আবার 2055 সালে পদার্পন করবেন বলে ঐ উপজাতির প্রধানের দাবী।

সেই আধ্যাত্মিক ধার্মিক সংগঠন Setuu র দাবী আজ পযর্ন্ত কোন বিজ্ঞানিক সংগঠন ভুল বলে দাবী করে নি। বরং তাদের অনুসন্ধান চলছে একদম বৈজ্ঞানিক উপায়েই এবং সেই লগ বইয়ের অনুবাদের প্রথম খন্ড তারা প্রকাশও করেছেন। এত কিছু রিসার্চের পরও কি আপনার মনে হয় না যে হনুমানজী আজও জিবীত? সিদ্ধান্ত আপনার।

[ আরও পড়ুন : হনুমানজীর পঞ্চমুখী রুপের রহস্য ]

চার।। হনুমানজীর জীবন্ত ছবি :

original Hanuman Pic



কৈলাসের মানস সরোবরের তীর্থ যাত্রার কথা আপনাদের সকলেরই জানা। সেখানে যেতে গেলে ভারত সরকার তীর্থ যাত্রীদের পূর্ণ ডাক্তারী পরীক্ষা করে তবেই তীর্থ যাত্রার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ঠিক সেই রকমেরই কর্নাটকের তিন বন্ধু মানস সরোবরের ছাড়পত্র পেয়ে তীর্থে যান। সেখানেই তারা ঘুরতে ঘুরতে এক পাহাড়ের গুহার সামনে আসেন। তারা লক্ষ করে যে পাহাড়ের এক গুহা থেকে আলোর জ্যোতি বেরোচ্ছে। তাদের মধ্যে থেকে এক বন্ধু সেই গুহার দিকে এগিয়ে যায় এবং ক্যামেরা বের করে গুহার ভেতরের ছবি তোলে। ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পরে তার বন্ধুরা সেই ক্যামেরার রিলটি প্রকাশ করাতে সবাই হতবাক হয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যাচ্ছে হনুমানজীর মত দেখতে কোন এক প্রানী হাতে কোন এক বই পড়ছেন। প্রানীটির যে ল্যাজ দেখা যাচ্ছে সেটা আধ পোড়া। বইটি আর কোন বই নয় – বইটি রামায়ন। সব দেখে শুনে বোঝা যায় ছবিটি আর কারও নয় ছবিটি মহাবীর হনুমানের।

এবার অনেক বলবেন যে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু আকস্মিক এবং ছবিটি Editing করা। এর উওরে বলা যায় কৈলাস ধাম যেতে গেলে ভারত সরকার দ্বারা তীর্থযাত্রীদের পুরোপুরি ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে তবে ছাড় পত্র দেওয়া হয়ে থাকে। তাই সেই মৃত ব্যক্তিরও যথাযথ ডাক্তারি পরীক্ষা করেই তবেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। মাথায় রাখবেন যে খুব ভালভাবে শারীরিক সুস্থ না হলে ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। তাহলে সেই রকম সাবলীল এক ব্যক্তির আকস্মিক মৃত্যু সত্যিই আশ্চর্যের। আর 1998 সালে আজকের মত এত ভাল ভাবে ছবি editing করা সম্ভব ছিল না। 

তাই সব দিয়ে বিচার করলে বোঝা যায় যে এই ছবিটি একদম অকৃত্রিম। হনুমানজীর আজও আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকার এই জলজ্যান্ত উদাহরণের পর আপনার কি মনে হয় না যে হনুমানজী অমর? সিদ্ধান্ত আপনার।

[ আরও পড়ুন : কোন Hanuman Photo বাড়িতে লাগাবেন? ]

পাঁচ।। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মণিষীদের দ্বারা হনুমানজীকে দর্শনের দাবী :


রামায়ন হয়েছিল ত্রেতা যুগে আর মহাভারত সংঘটিত হয়েছিল দ্বাপর যুগে। এই দুটো যুগের মধ্যে কয়েক লক্ষ বছরের পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু আমরা মহাভারতেও হনুমানজীর উল্লেখ পাই।

কলি যুগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম করা ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে হনুমানজী দর্শনের কথা শুনেছি। তাদের মধ্যে রয়েছে ঋষি মাধবাচার্য, তুলসীদাস, রাঘবেন্দ্র স্বামী এবং সত্য সাঁই বাবা। এদের হনুমান দর্শনের সময় কাল সম্পর্কে একটু ধারণাদি। ঋষি মাধবাচার্য দর্শন করেছিলেন ত্রয়োদশ শতকে। সেখানে তুলসীদাসের দর্শনের সময় কাল হল ষোড়শ শতকে এবং সত্য সাঁই বাবা ঊনবিংশ শতকে।

এই সমস্ত মহান লোকেদের হনুমান দর্শনের দাবী কখনই নাকচ করা যায় না। কারন তারা সকলেই ছিলেন পার্থিব সুখ বর্জিত মহা পুরুষ। এরা কখনই নিজেদের স্বার্থে মিথ্যাচার করবেন না। তাই বলা যায় হনুমানজী আজও জীবিত আমাদের মাঝে। তার প্রমাণ আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনীষীদের হনুমানজী দর্শনের মধ্য দিয়ে পেয়ে থাকি। এছাড়াও আমেরিকার মায়া সভ্যতা বা চীনের আদি গ্রন্থতে হনুমান স্বরুপ দেবতার উল্লেখ রয়েছে। তাহলে কি  হনুমানজী আজও আমাদের মাঝে জীবিত থাকার তত্ত্বটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়? সিদ্ধান্ত আপনার।

উপরের পাঁচটি প্রমান বর্নিত হল। এখানে bengalihanumanchalisa.com কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে না। এখানে সব দিক বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব আপনার যে রাম ভক্ত পবন পুত্র হনুমানজী কি সত্যিই আজও আমাদের কাছে রয়েছে? নাকি সব চরিত্রই কাল্পনিক?

One thought on “ভগবান হনুমান কি এখনও বেঁচে আছেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *