হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে হনুমানজী হলেন এই কলীযুগের একমাত্র জীবিত দেবতা। কোন ভক্ত যদি বিপদে পরে তাহলে তিনি ছুটে এসে সেই ভকের সঙ্কট নাশ করেন। তাই তার আরেক নাম সঙ্কট মোচন। যদিও হনুমানজীকে খুব সহজে প্রসন্ন করবার জন্য হনুমান চালিশা বা বজরং বাণ পাঠ করা হয় তবুও আজ আমরা হনুমানজীর এমন এক মন্ত্রের কথা আপনাদের বলব যে মন্ত্র কোন ভক্ত যদি কোন মনোবাসনা নিয়ে পাঠ করে, তার সেই মনোবাসনা বজরংবলী দ্রুত পূরণ করেন। আজ আপনারা হনুমান শাবর মন্ত্র সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। কি এই বজরং শাবর মন্ত্র? কিভাবে এই মন্ত্র আপনি জপ করবেন, এই শাবর মন্ত্রের কি প্রভাব রয়েছে ইত্যাদি সকল কিছু আজ আপনারা জানতে পারবেন।
অত্যন্ত শক্তিশালী এবং অদ্ভুত ফল প্রদানকারী এই বজরং শাবর মন্ত্র। এই শাবর মন্ত্রের এক বিশেষ দিক হল এই মন্ত্র জপের বিধি অত্যন্ত সহজ এবং সরল হয়। কিন্তু মন্ত্রের প্রভাব অনুভব করা যায় তৎক্ষণাৎ। শাবর মন্ত্র রচিত হয়েছিল সাধারণ মানুষের যাতে এই মন্ত্র সাধনা করতে পারে। এই মন্ত্র রচনা করা হয়েছিল একদম আঞ্চলিক ভাষায় এবং সাধারণ মানুষের জন্য রচনা হবার কারনে মন্ত্র গুলো জপ বিধি অত্যন্ত সহজ এবং সরল হয়ে থাকে। কোন প্রকার কঠোর বিধি বিধান মানবার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র মুখে উচ্চারণ করলেই মন্ত্র গুলো থেকে শুভ ফল পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন পন্ডিত ও শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিদের অভিমত অনুসারে হনুমান শাবর মন্ত্র সামান্য কিছু নিয়ম বিধি মেনে জপ করলে তাড়াতাড়ি ফল মলে। এবার সেই দিকেই আলোকপাত করা যাক।
হনুমান শাবর মন্ত্র জপের বিধি :
১) মন্ত্রটি জপ করা শুরু করতে হয় যেকোন মঙ্গলবার থেকে।
২) মন্ত্র জপ করবার সবচেয়ে ভাল সময় হল সকালবেলা অথবা সন্ধ্যেবেলা সূর্যাস্তের পর।
৩) যখনই জপ করবেন তখন স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে কোন লাল আসনে হনুমানজীর ফটো বা মূর্তির সামনে ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে জপ করবেন। হনুমানজীকে রাম নাম জপতে জপতে সিঁদুর অর্পণ করবেন এবং তুলসী পাতা সহযোগে সাধ্যমত ভোগ অর্পণ করবেন।
৪) মন্ত্র জপের আগে অবশ্যই রাম নাম জপ করবেন। কারণ রাম নাম ছাড়া হনুমানজীর কোন মন্ত্রই পূর্ণতা পায় না।
৫) প্রতিদিন এই মন্ত্র জপ করলে ৩ মালা বা ৫ মালা বা ৭ মালা জপ করবেন। আপনার পক্ষে যতবার সম্ভব ততবার জপ করবেন। শাস্ত্রে মন্ত্র জপের সংখ্যার কথা কোথাও উল্লেখ নেই। তবে প্রতিদিন একই সংখ্যক জপ করবেন
৫) প্রতিদিন একই সময়ে এবং একই সংখায় মন্ত্র জপ করবেন।
৬ ) হঠাৎ যদি বিপদ এসে পড়ে অথবা কর্মক্ষেত্রে সঙ্কট এসে পড়ে বা ব্যবসাতে ভারী লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাহলে ১১ দিনের ১০৮ পাঠের সংকল্প গ্রহণ করে মন্ত্রটি জপ করতে পারেন
মন্ত্র জপের সাবধানতা কি কি রয়েছে :
হনুমান শাবর মন্ত্রের জপ করলে আপনাকে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। যেমন :
১ ) কোন ভাবেই নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করা যাবে না।
২) সংকল্প চলাকালীন সাত্বিক আহার গ্রহণ করতে হবে।
৩) কাউকে কটূ কথা বলা যাবে না।
৪) সংকল্প গ্রহণ করলে অবশ্যই পূর্ণ করবেন। সংকল্প অর্ধেক করে ছেড়ে দেবেন না।
৫) এই মন্ত্র স্ত্রী পুরুষ সকলেই জপ করতে পারবেন। তবে মহিলারা ঋতুস্রাবের সময় মন্ত্র জপ বন্ধ রাখবেন।
বজরংবলীর শাবর মন্ত্রের কার্যকারিতা :
এই মন্ত্র জপের বিধি সহজ ও সরল হওয়ার কারনে সকলেই এই মন্ত্র জপ করে সুফল পেতে পারেন। কিন্তু এই মন্ত্র জপ করলে কি ফল পাওয়া যায়?
১) এই মন্ত্র নিয়মিত জপ করলে যেকোন প্রকারের সমস্যা ও বাধা দূর হয়।
২) যেকোন কাজ যদি দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকে তাহলে সেই কাজে সফলতা আসে।
৩) সকল কাজেই খুব সহজেই সফলতা আসে।
৪) ভূত, প্রেত বা কালাযাদুর নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্তি মেলে।
৫) চাকরি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে সফলতা আসে।
৬) জীবন থেকে দরিদ্রতা চিরতরে দূর হয়।
৭) ভক্তদের সকল মনোকামনা পূরণ করেন হনুমানজী।
হনুমান শাবর মন্ত্র :
ওঁ হনুমন্ত বীর, রখো হাথ ধীর, করো ইয়ে কাম,
ব্যাপার বাড়ে,তন্ত্র দূর হো, তোনা টুটে, গ্রাহক বাড়ে,
কারজ সিদ্ধ হোয়ে, না হোয়ে তো অঞ্জনী কি দুহাই।
যে ভক্ত প্রতিদিন এই হনুমান শাবর মন্ত্রের জপ পূর্ণ ভক্তি ও বিশ্বাস রেখে করেন বজরংবলী তার জীবন থেকে সকল প্রকার সমস্যা দূর করে তাকে এক সুন্দর সুখময় জীবন প্রদান করেন।