পাঁচটি বিস্ময়কর হনুমান মন্দির

Five Amazing Hanuman Temple in India



Amazing Hanuman Temple, Hanuman temple
কলীযুগের সবচেয়ে বেশি আরাধ্য দেবতা হল হনুমানজী। ভারতের প্রতিটি কোনায় এখন হনুমান মন্দির পাওয়া যায়। সেখান ভক্তদের ভিড় সারা বছর চোখে পড়ে। আবার অনেক বড় বড় হনুমান মন্দির রয়েছে যেখানে ভক্তরা অনেক দূর দূরান্ত থেকে আসেন হনুমানজীর দর্শন লাভের জন্য।তবে ভারতে এমন কিছু বিস্ময়কর ও অদ্ভূত হনুমান মন্দির রয়েছে যার সম্পর্কে আপনি হয়ত কোনদিন শোনেন নি। এই মন্দির গুলি সম্পর্কে জানলে আপনিও অবাক হবেন অবশ্যই। আসুন জেনেনি ভারতের এই রকম পাঁচ বিস্ময়কর হনুমান মন্দির সেগুলি কোন দিক থেকে বিস্ময়কর, এর পেছনে পৌরাণিক কাহিনী কি রয়েছে এবং এই মন্দির গুলিতে যেতে গেলে কিভাবে যাবেন।

উল্টো হনুমান মন্দির সাভার মধ্যপ্রদেশ: 




মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ইন্দোর থেকে মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার দূরে সাভার নামক স্থানে এই হনুমান মন্দিরটি আর পাঁচটা হনুমান মন্দির থেকে একদম আলাদা। আমরা সবাই হনুমানজী দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকা বা ধ্যানরত মূর্তি দেখে অভ্যস্থ। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন এই স্থানে যে হনুমান মন্দির রয়েছে তাতে হনুমানজীর যে বিগ্রহ রয়েছে তা পুরোপুরি উল্টো। হ্যাঁ সেই জন্যই এই মন্দিরটির নাম উল্টো হনুমান মন্দির। কিন্তু কেন এই মন্দিরের হনুমান মন্দিরের বিগ্রহটি উল্টো? এ নিয়ে রামায়নের একটি গল্প রয়েছে। রাবণভ্রাতা অহিরাবণ ছিলেন মায়াবী শক্তির অধিকারী। রাবণের আদেশ অনুসারে তিনি ছদ্মবেশে রামের সেনাবাহিনীতে ঢুকে যান এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন করে রাম ও লক্ষনকে অপহরণ করে পাতাল পুরিতে নিয়ে যান। অহিরাবণের এক বর প্রাপ্ত ছিল যে তাকে কেও পাতালে হারাতে পারবে না। এদিকে রাম ও লক্ষনকে অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই চারিদিকে হইচই পড়ে যায়। সবাই জানত এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারে একমাত্র পবনপুত্র হনুমানজী। সবাই হনুমানজীর কাছে এসে প্রার্থনা করতে লাগল তাদের উদ্ধার করতে। হনুমানজী পাতাল পুরীতে প্রবেশ করে অহিরাবণকে বধ করে রাম ও লক্ষনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। বলা হয় এই স্থান থেকেই হনুমানজী পাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। তাই এই মূর্তির মাথাটি নিচের দিকে রয়েছে। যেকোন সঙ্কট মোচনের জন্য ভক্তরা দূর দূর থেকে এখানে আসেন।

কি করে পৌছাবেন :

  • নিকটবর্তী রেলওয়ে ষ্টেশন : ইন্দোর রেলওয়ে জংশন ও উজ্জয়িনী রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে 25 -30 কি.মি.।
  • নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট : ইন্দোর এয়ারপোর্ট।


গিরজাবন্ধ হনুমান মন্দির রতনপুর :



নুমানজীর পূজায় মহিলাদের কিছুটা বিধি নিষেধ রয়েছে আমরা জানি। তবে আপনি জানেন কি যে এই ভারতেরই এমন একটি মন্দির রয়েছে যেখানে হনুমানজীকে মাতৃ রুপে পূজা করা হয়? ছত্রিশগড়ের বিলাসপুর থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরে রতনপুর নামক গ্রামের গিরজাবন্ধ হনুমান মন্দিরটি আর সমস্ত হনুমান মন্দির থেকে একদম আলাদা। এই মন্দিরটিতে হনুমানজী মাতৃ রুপে পূজিত হয়। বলা হয় এই মন্দিরটি দশ হাজার বছর পুরোনো।


এই মন্দিরটি নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। এই বিলাসপুরের এক রাজা ছিলেন। তার নাম ছিল রাজা পৃথ্বীরাজ দেবজু। তিনি একবার ভীষন রোগে আক্রান্ত হন। একদিন তিনি বিষন্ন মনে ভাবছেন যে তিনি হয়ত আর সুস্থ হবেন না। এই ভাবতে ভাবতে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। হঠাৎ তিনি স্বপ্নে প্রথমে হনুমানজীকে অস্পষ্ট ভাবে দেখতে  পেলেন। তারপর সেটি একটি দেবীর প্রতিচ্ছবি দেখতে পান তারপর সেই দেবী আবার বানর রুপ নেন। সেই বানরের এক হাতে লাড্ডুর থালা আরেক হাতে ছিল রাম মুদ্রা। তার ল্যাজ ছিল না। কানে ছিল কুন্ডল, মাথায় সুন্দর মুকুট ও গলায় মালা শোভা পচ্ছিল। পরনে ছিল অষ্ট সিঙ্গার। সেই রুপে হনুমানজী মহারাজাকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বললে ” মহামায়া কুন্ডে আমার মূর্তি রাখা আছে। সেই মূর্তি নিয়ে এসে প্রতিস্থাপন কর আর মন্দিরের পেছনে একটি পুকুর খনন কর। সেই পুকুরে প্রতিদিন স্নান করে বিধি বিধান মেনে আমার পূজা কর তোর সব রোগ সংকট দূর হয়ে যাবে”। পরদিন রাজা ঘুম থেকে উঠে তার সব বরিষ্ঠ সভাসদ ও পুরোহিত বর্গকে ডেকে সব কথা খুলে বললেন। রাজা তাদের সবাইকে নিয়ে মহামায়া কুন্ডে গেলেন সেই মূর্তি খোঁজ করতে। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খোঁজার পরও সেই মূর্তির সন্ধান কেউ করতে পারলেন না। সবাই হতাশ হয়ে আবার রাজমহলে ফিরে এলেন। সেদিন হতাশ রাজা আবার যখন ঘুমোলেন তখন সেই বানর দেবী আবার স্বপ্নে এসে বললেন রাজা হতাশ হয়ে পড়িস না। আমি সেই খানেই আছি। তুই গিয়ে ভালমত খোঁজ। পরদিন রাজা আবার সেই স্থানে গিয়ে হনুমানজীর এক মূর্তি আবিষ্কার করল। মূর্তিটার বাঁম কাঁধে শ্রীরামজী আর ডান কাঁধে লক্ষনজী। তার এক পদতলে কসাই আর এক পদতলে অহিরাবণ। মহারাজা সেই মূর্তি নিয়ে এসে মন্দির প্রতিষ্টা করলেন এবং তার পেছনে পুকুর খনন করলেন। বলা হয় রাজা সত্যিই রোগমুক্ত হয়েছিলেন। প্রতি বছর দূর দূরান্ত থেকে অগনতি ভক্তরা আসেন তাদের মনঃস্কামনা পূরণ করতে।


কি করে যাবেন :


  • নিকটবর্তী রেলওয়ে ষ্টেশন : বিলাসপুর রেলওয়ে ষ্টেশন। এই ষ্টেশন থেকে মাএ 25 km.  রতনপুরের গিরজাবন্ধ হনুমান মন্দির। ষ্টেশনের বাইরে থেকে মন্দিরে যাবার যানবাহন পেয়ে যাবেন।
  • নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট : স্বামী বিবেকানন্দ এয়ারপোর্ট। মন্দির থেকে দূরত্ব প্রায় 140 কি.মি.

তেলেঙ্গানার খাম্মাম জেলার হনুমান মন্দির : 




আমারা হনুমানজীকে বাল ব্রহ্মচারী বলে জানি। কিন্তু তেলেঙ্গানার খাম্মাম জেলার এই হনুমান মন্দিরটির এক অন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি পৃথিবীর একমাত্র মন্দির যেখানে হনুমানজী পূজিত হন তার স্ত্রীর সঙ্গে।
 এনিয়ে পরাসর সংহিতায় এর উল্লেখ রয়েছে। হনুমানজীর গুরু ছিলেন সূর্যদেব। তিনি সূর্যদেবের কাছে নয়টি বিদ্যার শিক্ষা নিতে। কিন্তু শেষ চারটি বিদ্যা অর্জনের জন্য তাকে বিবাহিত হতে হত। তাই তিনি সূর্যদেবেরই তপস্বী কন্যা সব্বর্চলাকে বিবাহ করেন। যদিও তার ব্রহ্মচৌর্য কোন ভাবেই লঙ্ঘন হয়নি। সব্বর্চলা বিবাহের পরেই তপস্বায় চলে যান। জগৎ সংসারের কলানের জন্য তাক বিবাহ করতে হয়েছিল।
এই মন্দিরেই হনুমানজীর সঙ্গে পূজিত হন সব্বর্চলা। এখানে সারা বছর ভক্তরা আসেন তাদের বিবাহিত জীবনের সমস্যা নিয়ে। মানা হয় এই মন্দিরে হনুমানজীর পূজা করলে  বিবাহিত জীবনের যেকোন সমস্যা মিটে যায়।

  • এ সম্পর্কে আরও পড়তে এখনে Click করুণ।



কি করে পৌছবেন :

  • নিকটবর্তী রেলওয়ে ষ্টেশন : খাম্মাম রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে প্রায় 24 কি.মি.। ষ্টেশন থেকে যান বাহনের সমস্ত সুবিধা পাওয়া যায়।
  • নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট : বিজয়ওয়াড়া এয়ারপোর্ট।


শ্রী হনুমান দাণ্ডী সংকীর্তন মন্দির দ্বারকা :



Photo Via : Wikimedia Commons.


গুজরাটের বেট দ্বারকাতে অবস্থিত শ্রী হনুমান দান্ডি সংকীর্তন মন্দিরের বৈশিষ্ট্য হল এই মন্দিরে অবস্থিত হনুমানজী অবস্থান করছেন তার পুত্র মকরধ্বজের সঙ্গে। হনুমানজীকে আমরা বাল ব্রহ্মচারী হিসাবে জানি। কিন্তু এই মন্দিরে হনুমানজী তার পুত্রের সঙ্গে এই মন্দিরে বিরাজমান।

এ সম্পর্কে এই ব্লগে আগেই বলা হয়েছে। তাও সংক্ষেপে বলে রাখি। হনুমানজীর এক পুত্র সন্তান ছিল। এনিয়ে রামায়নে এক কাহিনী রয়েছে। লঙ্কা দহনের পর হনুমানজী যখন সাগরে আগুন নেভাতে যায় তখন তার ল্যাজ থেকে এক ফোঁটা ঘাম ঝড়ে পরে। সেই ঘাম খেয়ে এক মাছ গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেই মাছের পেট কেটে এক বানর রুপী শিশুকে উদ্ধার করে রাবণপুত্র অহিরাবণের সৈন্যদল। তার নাম দেয় মকরধ্বজ। অহিরাবণ তাকে পাতালের দ্বার পালক হিসেবে নিয়োগ করে। হনুমানজী যখন পাতাল থেকে রাম ও লক্ষনকে উদ্ধার করতে গিয়ে মকরধ্বজের কাছে বাধা পায় সঙ্গে তার পরিচয়ও জানতে পারে। তাদের দুজনের প্রবল লড়াই হয়। পরে তাকে ল্যাজে বেঁধে হনুমানজীকে রাম লক্ষনকে উদ্ধার করেন। অনুমান করা হয় যে ঐই স্থানেই তাদের দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। এই মন্দিরে ভক্তবৃন্দরা দূর দূরান্ত থেকে আসেন শরীরের জটিল রোগ নিরাময়ে ও মনঃস্কামনা পূরণে।


  • এ সম্পর্কে বিশদে জানতে এখানে Click করুণ।



  • নিকটবর্তী রেলওয়ে ষ্টেশন: ওখা রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে জেটি বন্দরে এসে জলপথে প্রায় 2 কি.মি.।
  • নিকটবর্তী বিমানবন্দর : জামনগর বিমানবন্দর থেকে ওখা পর্যন্ত এসে সেখান থেকে জলপথে প্রায় 2 কি.মি.।

হনুমান ধারা মন্দির চিত্রকূট :



মধ্যপ্রদেশের চিএকূটে রামঘাট থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে বিন্ধ পর্বত মালায় অবস্থিত হনুমান ধারা মন্দিরটি আর পাঁচটি হনুমান মন্দির থেকে একেবারে আলাদা। এই মন্দিরটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এখানে যেতে মোট 360 টি সিঁড়ি পাড় করে যেতে হয়।

এবার আসি এই মন্দিরটি কেন আর পাঁচটি কেন আলাদা? এখানে হনুমানজীর যে বিগ্রহটি রয়েছে তার উপরে দুটি প্রাকৃতিক জল গ্রন্থি রয়েছে যার জল অবিরত বয়ে চলেছে। একটি জল ধারা বয়ে এসে হনুমানজীর ডান হাত স্পর্শ করে বিলিন হয়ে যায়। এই মন্দিরটি নিয়ে এক পৌরাণিক গল্প রয়েছে। লঙ্কা দহনের পর হনুমানজীর যখন সাগরে তার শরীরের দহন মেটাতে অসমর্থ হন তখন তিনি রামজীকে বলেন যে হে রামজী লঙ্কা দহনের পরও আমার শরীরের ক্রোধ জ্বালা কোন ভাবেই মিটছে না। তখন রামজী হনুমানজীকে এই স্থানে আসতে বলেন এবং তিনি বাণ ছুরে পর্বতের মাথা থেকে জল ধারা বহাতে শুরু করেন। হনুমানজী সেই জল ধারার নীচে বসে নিজের ক্রোধ জ্বালা শান্ত করেন।


বলা হয়ে থাকে এই স্থানেই শ্রীরামজী তুলসীদাসজীকে দর্শন দেন। এই স্থানে  দূর দূরান্ত থেকে আসেন শরীরের ও মনের তাপ কমাতে। বলা হয়ে থাকে এই মন্দিরে এলে যেকোন শারীরিক ও মানসিক রোগ উপশম হয়।




  • নিকটবর্তী রেলওয়ে ষ্টেশন : চিত্রকূট ধাম রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে 11 কি.মি.।
  • নিকটবর্তী বিমানবন্দর :  খাজুরাহো বিমানবন্দর থেকে 165 কি.মি.।

আরও পডুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *