পাকিস্তানে পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির

Panchamukhi Hanuman Mandir in Pakistan / Hanuman Mandir in Karachi 


Panchamukhi Hanuman Mandir of Pakistan, Hanuman mandir of Karachi
Hanuman Mandir of Karachi

কথায় বলে রামভক্ত হনুমান সর্বত্র বিরাজমান। হনুমানজী ভক্তদের ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেন না। তাই হনুমানজীর মন্দির শুধু ভারতে নয় পৃথিবীর যেকোন দেশে রয়েছে। ঠিক তেমনি একটি পঞ্চমুখী হনুমানজীর মন্দির রয়েছে পাকিস্তানেও। আরও অবাক হবার বিষয় হল পাকিস্তানের এই মন্দিরটি 1500 বছর পুরোনো।

অবস্থান : আরব সাগরের তীরে পাকিস্তানের করাচী শহরের মেহেতাব কলোনীর সোলজার বাজার এলাকায় অবস্থিত এই হনুমান মন্দিরটি। মন্দিরির পুরো ঠিকানা : 3 নং সোলজার বাজার রোড, সোলজার বাজার মেহেতাব কলোনী, করাচী, সিন্ধ – 71000, পাকিস্তান।

মন্দির স্থাপত্য : এই মন্দিরটি আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পুরোনো। স্থাপত্য কলার দিক থেকে এই মন্দিরটি এক অনন্য রুপ নিয়েছে। এই মন্দিরটি হলুদ মার্বেল  পাথর দিয়ে প্রস্তুত। মন্দিরটি আঠারো শতকে আবার পুনঃনির্মিত করা হয়। মন্দিরটিতে হনুমানজী ছাড়াও আরও অন্য হিন্দু দেব দেবীর মূর্তিও রয়েছে। প্রতি বছর এইখানেই ধুমধাম করে হনুমান জয়ন্তী পালনও করা হয়।

মূর্তি : এটি হনুমানজীর একমাত্র মন্দির যেখানকার মূর্তিটি সম্পূর্ন ভাবে প্রাকৃতিক। কোন মনুষ্য সৃষ্টি নয়। নীল ও সাদা এই আট ফুট মূর্তিটি বহু শতাব্দী আগে পাওয়া গিয়েছিল যেখানে মন্দিরটি এখন দাঁড়িয়ে আছে। এটি পঞ্চমুখী হানুমানের হনুমানজীর পাঁচটি মুখ অর্থাৎ রুপই বতর্মান। যথা : হনুমান, নরসিংহ, গঢ়ুর, বরাহ ও হায়গ্রীভ বা অশ্বরুপ। রাবণ ভ্রাতা মা ভবাণীর ভক্ত অহিরাবণ দ্বারা রাম ও লক্ষণজীকে অপহরণ করে নিয়ে পাতাল পুরীতে নিয়ে গেলে হনুমানজীও পৌছে যান পাতালে তাদের উদ্ধার করতে। সেখানে পাঁচ দিকে পাঁচ দীপ একবারে নেভাতে হত হনুমানজীকে অহিরাবণকে হত্যা করবার জন্য। সেই পাঁচ দীপ নেভানোর জন্যেই হনুমানজীর পঞ্চমুখ ধারন। হনুমানজী এই পঞ্চমুখ ধারন করে ঐ পাঁচ দীপ নিভিয়ে অহিরাবণকে হত্যা রামজী ও লজণজীকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন।

মন্দির নিয়ে ঐতিহাসিক গল্প কথা : মন্দির নিয়ে এক স্থানীয় এক গল্প কথা প্রচলিত আছে। ঐ স্থানেই এক সন্ন্যাসী ধ্যান করতেন। সেই সন্ন্যাসীকে একদিন হনুমানজী সপ্নে দেখা দেন এবং নির্দেশ দেন যে ঐ স্থানেই তার মূর্তি মাটির নীচে রয়েছে, সেই মূর্তি প্রতিস্থাপন করে পূজা করতে। সেইমত সন্ন্যাসী পরদিন মাটি মাত্র এগারো বার মাটি সরাতেই হনুমানজীর পঞ্চমুখী মূর্তিটি খুঁজে পান। সন্ন্যাসী সেখানেই সেই মূর্তিটি স্থাপন করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই মন্দিরটিই আজকের করাচীর পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির। এই মত অনুসারে এই মূর্তিটি প্রায় সতের থেকে আঠারো লাখ বছর পুরোনো কারন সন্ন্যসীর এই ইতিহাস ত্রেতা যুগের। পৌরাণিক কথা অনুযায়ী রামজীও একবার এই মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন।

মন্দিরের মাহাত্ম্য : বিশ্বের প্রচীনতম হনুমান মন্দিরের মধ্যে অন্যতম করাচীর এই সোলজার বাজার এলাকার পঞ্চমুখী হনুমান মন্দিরটি ভক্তদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বলা হয়ে থাকে যে এই মন্দিরটি এগারো বা একুশবার কেন্দ্র করে চক্কর কাটলে ভক্তদের সকল দুঃখ কষ্ট বাধা বিপত্তি খুব সহজেই দূর হয়। স্থানীয় হিন্দু জাতীর লোকেরাতো বটেই সুদূর বালুচিস্থান থেকে বিভিন্ন ভক্তরা আসেন এই মন্দির দর্শন করতে। শুধু হিন্দু ধর্ম নয় সকল ধর্মের লোকেরই সমাগম দেখা যায় এই মন্দিরে। দুই দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলে ভারত থেকেও অনেক দর্শনার্থীরা যান করাচীর এই হনুমান মন্দির দর্শন করতে।

মন্দিরের বর্তমান পরিস্থিতি : ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর পাকিস্তানের যে কটি মন্দিরের ওপর হামলা হয়েছিল তার মধ্যে একটি এই করাচির হনুমান মন্দিরটি। মন্দিরটি আবার 2012 সালে মেরামতির কাজ শুরু হয়। সবচেয়ে মজার কথা হল সাম্রতিক কালে করাচী প্রশাসন মন্দিরের পাশেই কোন প্রশাসনিক খনন কাজ করছিল। সেখান থেকেই তিনটি মূর্তি পাওয়া যায়। মূর্তি গুলি হল ভগবান গণেশের, নন্দী মহারাজের ও পবন পুত্র হনুমানজীর। ঐতিহাসিকবিদদের মতে এই মূর্তি গুলি প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরোনো।



পৃথিবীর যেকোন কোনাতেই আপনি থাকেন না কেন হনুমানজী সেখানেই উপস্থিত থাকেন। ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে এই পাকিস্তানের করাচীর পঞ্চমুখী হনুমান মন্দিরটি অনন্য। বিভিন্ন রোগ বাধা বা দুঃখ কষ্ট দূর করতে এই স্থানে স্থানীয় হিন্দুরাতো বটেই অন্য সকল ধর্মের লোক দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন এই মন্দির দর্শন করতে। আপনি কি জানতেন পাকিস্তানের মত একটি দেশে এই 1500 বছর পুরোনো পঞ্চমুখী হনুমান মন্দিরটি আজও বিরাজমান?

আরও পড়ুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *