হনুমানের জন্মের ইতিবৃত্তান্ত

Birth Story of Hanuman  

In this article you can find the complete birth story of Lord Hanuman and his family.



রামভক্ত পবনপুত্র হনুমানের অপার ক্ষমতার কথা আমরা সকলেই প্রায় জানি। এই কলীযুগে যখনই কেও কোন সঙ্কটে পড়ে ওনাকে স্মরণ করে উনি তার সেই সঙ্কট খুব সহজেই দূর করে দেন। পিতা বানর রাজ কেশরী ও মাতা অঞ্জনার কোলে হনুমানজী ভূমিষ্ট হয়েছিলেন। হনুমানজীর আধ্যাত্মিক পিতা ছিলেন পবন। তাই তাকে পবন পুত্র বলা হয়। আজকে আমরা জেনে নেব হনুমানজীর জন্মের ইতিবৃত্ত।
হনুমানজীর মা অঞ্জনা ছিলেন স্বর্গ লোকের এক অপ্সরা। তার নাম চিল পুঞ্জিকস্থলা। তিনি একবার বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে দেখলেন এক বানর ধ্যানমগ্ন হয়ে রয়েছে। এক বানর ঋষির মত ধ্যানপরায়ণ দেখে তিনি তার হাসি থামাতে পারেন নি। তিনি নানা ভাবে বিরক্ত করে সেই ধ্যানরত বানরের ধ্যান ভাঙাতে চাইলেন। হনুমানটি পুঞ্জীকস্থলার দিকে কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ না করেই ধ্যানমগ্ন রইলেন। কিন্তু পুঞ্জীকস্থলা তাতেও ক্ষান্ত হননি। ধ্যানরত বানরকে আরও বিরক্ত করবার নিমিত্তে তার উদ্দেশ্যে সে পাথর ছুড়তে মারতে থাকে। এতে বানরটির ধ্যান ভেঙ্গে যায় এবং বানরটি একটি ঋষির রুপ ধারণ করে। পুঞ্জীকস্থলা বুঝতে পারে যে সে এক ঋষির তপস্যা ভঙ্গ করেছে। ঐ ঋষি তার তপস্যা বলে হনুমান রুপ ধারন করে ধ্যান করে তপস্যারত ছিলেন । ঋষি অত্যন্ত ক্রোধিত হয়ে পড়েন। তিনি পুঞ্জীকস্থলাকে অভিশাপ দেন যে যখনই কোন ব্যক্তির প্রেমে পড়বে সে বানর রুপি হয়ে পড়বেন। পুঞ্জীকস্থলা অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েন এবং ঐ ঋষির কাছে অভিশাপ ফিরিয়ে নেবার জন্য আকুতি করতে থাকেন। ঋষি উওর করেন তার শাপ ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে তিনি বলেন তিনি বানর রুপি হওয়া সত্ত্বেও তিনি যে ব্যক্তির প্রেমে পড়বে তার প্রেমে কোন কমতি হবে না।

[ আরও পড়ুন : মানষিক অবসাদ দূর করতে হনুমান চালিশা ]

একদিন দেবরাজ ইন্দ্র পুঞ্জীকস্থলাকে নিজের মনের মত বর চাইতে বললে তিনি ইন্দ্রদেবকে তাকে পাপের মুক্ত করবার কথা বলেন। ইন্দ্রদেব সব কিছু শুনে তাকে মর্তে জন্মাবার উপদেশ প্রদান করলেন। তিনি বললেন সেখানেই তার একজনের সঙ্গে প্রেম হবে।  সেই ব্যক্তির সঙ্গে তার প্রথমে প্রেম তৎপর বিবাহ হবে এবং তার গর্ভে মহাদেব ভূমিষ্ট হবেন। তাতেই সে পাপ মুক্ত হবেন। সেই মত পূঞ্জীকস্থলা অঞ্জনা নামে মর্তে আসেন। মর্তে এক জঙ্গলে সে ঘুরতে ঘুরতে তিনি এক সুন্দর যুবকের দেখা পান। সেই সুদর্শন চেহারার যুবকের প্রেমেও পড়ে যান অঞ্জনা। সঙ্গে সঙ্গে তার রুপ বানর আকার ধারন করে ঋষির অভিশাপ অনুযায়ী। সে সময়ই সেই সুদর্শন যুবক অঞ্জনার দিকে এগিয়ে আসেন। অঞ্জনা তার রুপ লুকিয়ে নেয় এবং বলেন সে অত্যন্ত কুৎসিত। তারপর অঞ্জনা লক্ষ্য করে যে সেই সুন্দর চেহারার যুবকও এক বানর রুপি। যুবকটি উওর করল যে সে বানর রাজ কেশরী। সে তার ইছা অনুসারে মনুষ্য রুপ ধারন করতে পারে। এই ভাবে একে ওপরের সঙ্গে প্রথমে পরিচয় অতঃপর প্রেম এবং শেষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন।

[ আরও পড়ুন : কিভাবে হনুমান চালিশা মন্ত্র বৈজ্ঞানিকভাবে কাজ করে  ]

বিবাহের অনেকদিন তারা সন্তান সুখ হতে বঞ্ছিত ছিলেন। একদিন বানর রাজ কেশরী ও অঞ্জনা মাতঙ্গ ঋষির আশ্রমে গেলেন তাদের সন্তান লাভের আশায় । মাতঙ্গ ঋষি অঞ্জনাকে নারায়ন পর্বতে বারো বছর  উপবাস থেকে তপস্যা করবার উপদেশ প্রদান করলেন। এইভাবে অঞ্জনা তার উপদেশ মেনে তপস্যারত হলেন এবং দীর্ঘ বারো বছর তপস্যা করার পর গর্ভবতী হলেন। বায়ু তার তপস্যায় খুশী হয়ে তাকে বর প্রদান করল যে তার অগ্নি, সূর্য, সুবর্ণ, বেদ, বেদাঙ্গে জ্ঞানী সন্তান তার গর্ভে জন্ম নেবে। তার তপস্যাতে প্রসন্ন হয়ে একবার মহেশ্বর তার সামনে উপস্থিত হয়ে তাকে বর চাইতে বললেন। অঞ্জনা মহেশ্বরের কাছে অনুরোধ করেন যে মহেশ্বর যদি তার গর্ভে সন্তান হয়ে জন্ম গ্রহন করেন তবে তার শাপ মুক্তি ঘটবে। মহেশ্বর অঞ্জনার তরফে চাওয়া বরে রাজি হয়ে যান এবং কথা দেন যে তিনি তার অবতার রুপে অঞ্জনার গর্ভে জন্ম গ্রহন করবেন।

[ আরও পড়ুন : Panchamukhi Hanuman Stuti in Bengali ]

এবার এদিকে একবার রাজা দশরত পুত্র লাভের আশায় যজ্ঞ করছিলেন। সেই যজ্ঞের প্রসাদ বিতরণের সময় যেটা কৌশল্যার পাতে পড়ার কথা ছিল সেটি একটি চিল এসে আচমকাই নিয়ে উড়ে চলে যায় এবং তা অঞ্জনীর পাতে পড়ে। অঞ্জনী সেটি শিব ঠাকুরের প্রসাদ ভেবে গ্রহন করে এবং গর্ভবতী হয়। অবশেষে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে মঙ্গলবার শিব ঠাকুরের একাদশতম রুদ্র অবতার হনুমানের জন্ম হয় এবং মাতা অঞ্জনা পাপ মুক্ত হন। মাতা অঞ্জনার গর্ভে জন্ম নেওয়াতে হনুমানজীর আরেক নাম অঞ্জনায় এবং পিতা কেশরীর নাম থেকে কেশরীনন্দন।

[ আরও পড়ুন : ভগবান হনুমান কি এখনও বেঁচে আছেন? ]

এবার প্রশ্ন হল হনুমানজী হলেন বানর রাজ কেশরী ও মাতা অঞ্জনীর পুত্র। কিন্তু তাকে পবনপুত্র কেন বলা হয়? হনুমানজীর জন্মে ভগবান পবনের অনেক বড় অবদান ছিল। দশরথের স্ত্রীর পাতে যে প্রসাদ পড়বার কথা ছিল সেটা বায়ুর কারনে অঞ্জনার পাতে এসে পড়ে। অর্থাৎ যে প্রসাদ মাতা অঞ্জনা শিব ঠাকুরের প্রসাদ হিসেবে খায় এবং তার গর্ভে শিবের রুদ্র অবতার জন্ম নেয় তার অনেকটাই পবনের জন্য সম্ভব হয়েছিল। ভগবান বায়ু সর্বদাই হনুমানকে তার পুত্র হিসেবে বিবেচিত করেছিলেন এবং তার ক্ষমতা অর্থাৎ মারুতের ন্যায় তাকে গমনের ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। মারুৎ কথার অর্থ হল বায়ুর ন্যায় দ্রুতগতি। এর জন্য হনুমানজীর আরেক নাম ” মারুতি”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *